হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে আবারও হত্যা!
ময়মনসিংহের ত্রিশালে আবুল কালাম নামে একজনকে হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বুধবার গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটি স্থানীয় কৃষকদের জমি দখল করে বিভিন্ন কম্পানির কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আসছিল।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে স্থানীয় ভূমিদস্যু চক্রের ‘জিলানী বাহিনী’র প্রধান আব্দুল কাদের জিলানীও রয়ছেন।
অন্যরা হলেন জিলানীর ভাই বড় ভাই আব্দুস সোবহান ও জিলানীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৭)।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার মঈন জানান, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার জামতলী গ্রামে গত ১৪ এপ্রিল রাতে পূর্বশত্রুতার জেরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আবুল কালাম ও তার দুই ভাতিজাকে বাড়ির সামনে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে আবুল কালাম (৫৮) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাতিজা বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, নিহত আবুল কালামের ভাতিজা মো. সোহাগ নিহত রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন। সেই মামলায় সোহাগ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ায় জিলানী ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর এবং হত্যার হুমকি দেয়।
এরই জেরে গত ১৪ এপ্রিল রাতে আবুল কালাম হত্যা মামলার বাদী সোহাগকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ চালায়। পরে তার চিৎকারে চাচা আবুল কালামসহ অন্যরা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে আব্দুল কাদের জিলানীসহ ৯ জন তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। তারা আবুল কালামের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হত্যার পর আত্মগোপনে চলে যায় জিলানীসহ অন্যরা।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মূলত বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন মাস্টার হত্যা মামলা এবং রফিকুল ইসলাম হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। জিলানীর নেতৃত্বে চক্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের জমি দখল করে বিভিন্ন কম্পানির কাছে অতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রি করত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই হত্যা মামলা থেকে নিজের ভাই ও সহযোগীদের বাঁচাতে এবং স্থানীয়ভাবে ভীতি সঞ্চার করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় কাউকে হত্যা করে মতিন মাস্টার হত্যা মামলার সাক্ষীদের ভয় দেখিয়ে হাজিরা থেকে বিরত রাখার পরিকল্পনা করে তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে স্থানীয় একটি স্কুলের দপ্তরি রফিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়।
এই রফিকুল মতিন মাস্টার হত্যার বিচারের দাবিতে মিছিল-মিটিং করে আসছিলেন। দপ্তরি রফিকুল হত্যায় জিলানীসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এই রফিকুল হত্যা মামলার সাক্ষী মো. সোহাগকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাক্ষী সোহাগকে ঘটনার দিন রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হলে তার চাচা নিহত আবুল কালাম তাকে বাঁচাতে এসে নির্মমভাবে খুন হন।