বাংলাদেশ নিয়ে ভারতেরও অস্বস্তি
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। এই চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সর্বশেষ চাপ হলো মানবাধিকার সংক্রান্ত রিপোর্ট।
এই রিপোর্টে বাংলাদেশকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা আপত্তিকর, অগ্রহণযোগ্য এবং অসত্য। বাংলাদেশ সম্বন্ধে নেতিবাচক বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তুলে ধরছে চাপ দেওয়ার একটা কৌশল হিসেবে।
শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মধ্যেও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। যদিও দুই দেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং এই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যাচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু কিছু বিষয় নিয়ে ভারতের মধ্যে শঙ্কা এবং অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছে। ভারতের বিভিন্ন থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং কূটনীতিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের অনেক ব্যাপারেই ভারত শঙ্কিত।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের গ্রেপ্তার এবং ১৯ দিন তাকে আটকে রাখার ঘটনাটি নিয়ে ভারতের কূটনৈতিকদের মধ্যে নানা রকম কথাবার্তা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই ভারতীয় কূটনীতিকরা মনে করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশে হিজাব বিতর্ক, টিপ নিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমশ সাম্প্রদায়িক শক্তি দানা বেঁধে উঠছে বলে ভারত মনে করছে।
এই সাম্প্রদায়িক উত্থান বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক নীতির পরিপন্থী বলে ভারত মনে করে। বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরেই জঙ্গিবাদীগোষ্ঠী, সন্ত্রাসবাদিগোষ্ঠী আবার নতুন করে সংঘবদ্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে গত বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় যেভাবে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালানো হয়েছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য খুবই শঙ্কার বিষয় বলে ভারত মনে করে।
তবে ভারত বিশ্বাস করে যে, বর্তমান সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না এবং তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু ভারত সাম্প্রতিক সময়ে এটাও মনে করছে যে, সরকারের ভিতরে প্রশাসনে এবং বিভিন্ন স্থানে উগ্র মৌলবাদী শক্তি বাসা বেধেছে এবং তারা সরকারের যে প্রতিশ্রুত নীতি-কৌশল এবং আদর্শ সেটার পরিপন্থী কাজ করছে।
তাছাড়া ভারত এটা মনে করছে যে, আওয়ামী লীগের ভেতরেও কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং এরা আওয়ামী লীগের সেক্যুলার এবং উদার চেতনার জন্য একটা হুমকি।
তাছাড়া বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে অব্যহতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলেও ভারত মনে করে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে পার্থক্য হলো, ভারত তাঁর অস্বস্তিগুলো নিয়ে নিয়মিত বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলছে, কূটনৈতিক পর্যায়ে বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে এবং এগুলো সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ভারত মনে করে যে বর্তমান সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এই সমস্ত সংকটগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেন। তিনি ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণে আর কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব নয় বলেও ভারতে মনে করে। ভারতের বিভিন্ন কূটনৈতিক সূত্র থেকে বলা হচ্ছে যে, এই অস্বস্তিগুলো সম্পর্কে ভারতী ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে।