গুমের সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনী জড়িত থাকার বিষয়টি এখন প্রমাণিত
বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলো জড়িত থাকার অভিযোগ শুরু থেকেই ছিল। দিনে দিনে এই বিষয়টি এখন তথ্যপ্রমানসহ স্পষ্ট হয়ে গেছে গুম রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলো করেছে।
ইলিয়াছ আলীকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল গুম করার ঘটনার ১০ বছর পর সুইডেন ভিত্তিক গণমাধ্যম নেত্রনিউজের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সেদিনের ঘটনার সাথে জড়িতদের নাম।
এছাড়া ৬ মাস গুম করে রাখা মশিউর রহমান মামুন সম্প্রতি আমার দেশকে ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন তাঁকে রাষ্ট্রীয় পুলিশের ডিবি কিভাবে ধরে নিয়ে গুম করেছিল। তাঁকে গুম করার জন্য সরাসরি বর্তমান পুলিশের আইজি ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমদকে দায়ী করেছেন।
শুধু তাই নয়, সাংবাদিক কনক সারোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমদের এক টেলিকথোপকথনে স্পষ্ট করেই বলতে শোনা গিয়েছিল গুমের সাথে জড়িত র্যাবের দুই কর্মকর্তা জিয়া এবং জোবায়েরের নাম।
এই দুইজনই সেনাবাহিনী থেকে ডেপুটেশনে র্যাবে কর্মরত ছিলেন এক সময়। এই কথোপকথনে জেনারেল আজিজ আহমদকে বলতে শোনা যায়, গুম-খুন তারেক সিদ্দিকীর (শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা) নির্দেশে জিয়া এবং জোবায়ের করে।
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ফাঁস হওয়া ওই টেলিসংলাপে স্পষ্ট উঠে এসেছে, বাংলাদেশে সংঘটিত সব গুমের প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বর্তমান নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
জিয়াউল আহসানের বিষয়ে শেখ হাসিনার কাছে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ বিস্তারিত তুলে ধরলেও এনিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে টেলিকথোপকথনে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। সেনাপ্রধানের কথোপকথনের মাধ্যমে প্রমানিত, নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিককে দিয়েই গুমের মতো ভয়াবহ মানবতা বিরোধী অপরাধ করাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
যদিও ইতোমধ্যে র্যাবের ৭ কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে আমেরিকা। কিন্তু এই তালিকায় জিয়া এবং জোবায়েরের নাম নেই। জিয়াউল আহসান এক সময় র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন। বর্তমানে পদোন্নতি পেয়ে তিনি সরকারের ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) দায়িত্বে রয়েছেন।
এদিকে গত বছরের ১৬ আগষ্ট বাংলাদেশ গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট ওয়াচ। সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-গুমের শিকার ৮৬ জনের খোঁজ দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এই গুমের সাথে জড়িতরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য।
রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ধরে নিয়ে গুম করার বিষয়টি শুরুর দিকে ওপেন সিক্রেট হলেও দিনে দিনে এটি পরিস্কার হয়ে গেছে। গুমের সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনী জড়িত থাকার বিষয়টি এখন আর ওপেন-সিক্রেট নয়। এখন প্রমানিত সত্য। বিশেষ করে র্যাব জড়িত থাকার প্রমানের ভিত্তিতেই গত ডিসেম্বরে আমেরিকা এই বাহিনীর ৭জন কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
গুম করেই শেষ নয়। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদি সরকারের মন্ত্রিরা গুমের ঘটনা গুলোকে নিয়ে উপহামূলক বক্তব্যও দিয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনও এসব বিষয় উঠে আসে।
সেই প্রতিবেদন বলা হয়, বাংলাদেশের নেতৃত্ব ভিকটিমদের উপহাস করে এবং নিয়মিতভাবে তদন্তে বাধা দিয়ে থাকে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে সরকারের তার নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা জোরপূর্বক গুমের ঘটনা সমাধান করার কোন ইচ্ছা নেই।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ডেথ স্কোয়াডের সদস্যদের বিদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করা উচিত নয়।
এমনকি জাতিসংঘের পিস অপারেশন ডিপার্টমেন্টকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে শান্তিরক্ষী থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নির্যাতন, বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত বাংলাদেশী কমান্ডারদের বিরুদ্ধে পৃথক মানবাধিকার বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা আনতে হবে।
এদিকে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালকও ইলিয়াস আলীর গুমের সঙ্গে সংস্থাটির জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, সুইডেন-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুমের সঙ্গে র্যাবকে জড়িয়ে যে কথা বলা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।
উৎসঃ আমার দেশ