দলের নেতারা তৎপর
রাজশাহীতে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছেন নেতারা
আনু মোস্তফা, রাজশাহী
করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কেটে যাওয়ায় রাজশাহীতে সব ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড আবার শুরু হয়েছে। এখন ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে বড় রাজনৈতিক দলের নেতারা তৎপর হয়ে উঠেছেন।
ইফতার ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা মতবিনিময় ও আলোচনা করছেন। আগামী বছরের মাঝামাঝি রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং আগামী বছরের শেষে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই এসব আয়োজন করা হচ্ছে। মূলত ইফতার অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মঞ্চ। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ইফতার আয়োজনেও সব শ্রেণির মানুষের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, এ বছর রোজার প্রথম দিন থেকে পথচারী ও এলাকাবাসীর মাঝে ইফতার বিতরণ করছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। ইফতারের আগে আলোচনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানও করছেন।
ডাবলু সরকার বলেন, আমরা সারা বছর মানুষের জন্য কাজ করি। রোজার মাসেও তাদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা থেকে প্রতিদিন ইফতার বিতরণ করছি। ইফতারের আগে নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ও করছি। এতে এলাকার মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার যোগাযোগটা বাড়ছে। আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ডাবলু সরকার একজন প্রার্থী। অনেক আগে থেকে তিনি গণসংযোগ করছেন। রোজার মাসে একেকদিন একেক এলাকায় গিয়ে তিনি ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
১১ এপ্রিল রাজশাহী জেলা পুলিশের ইফতার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর সব আসনের সংসদ সদস্য (এমপি)। পরদিন রাজশাহী মহানগর পুলিশের ইফতার অনুষ্ঠানেও জেলার সব এমপি, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সব অনুষ্ঠানে তারা পরস্পরের সঙ্গে ভাববিনিময় করেন। এ সব অনুষ্ঠানেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে বক্তব্য দিচ্ছেন।
২১ এপ্রিল মোহনপুরে জমকালো ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা। এতে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েনউদ্দিন অংশ নেন। ইফতার পূর্ব আলোচনা সভায় নেতারা আগামী সব নির্বাচনে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের জোরালো আহ্বান জানান। পরদিন নগরীতে আলোচনা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। প্রতিদিনই প্রতিটি উপজেলার কোথাও না কোথাও ইফতারের আয়োজন করছেন রাজনৈতিক নেতারা। এতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকছেন। ইফতার অনুষ্ঠান হলেও এসব আয়োজন রাজনৈতিক মতবিনিময় সভায় রূপ নিচ্ছে।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা বলেন, করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার বড় পরিসরে বসার সুযোগ হয়নি। তাই এবার ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে খোলামেলা কথা বলা ও মতবিনিময়ের সুযোগ হচ্ছে। এ অনুষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার মঞ্চ হিসাবে পাওয়া যাচ্ছে। ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান হলেও ইফতার অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অনুষ্ঠান।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপির নেতারাও ইফতারের আয়োজন করছেন। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। ১৫ এপ্রিল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু রাজশাহীতে নগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরদিন তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপি ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। বিএনপি নেতা দুলু বলেন, ইফতারের মতো সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়াও কথা বলার সুযোগ হচ্ছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এর মধ্যদিয়ে উজ্জীবিত হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, রোজার মাসই তিনি রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় দলীয়ভাবে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে যাবেন।
নওগাঁর নিজ নির্বাচনি এলাকা নিয়ামতপুরে ইফতার আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার। বৃহস্পতিবার শ্রীমন্তপুর হাইস্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ ইফতারের আয়োজন করে। ইফতারের আগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে নৌকায় ভোট দেওয়ার বিকল্প নেই। জনগণকে এটাই বোঝাতে হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও দলীয় ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। শিমুল বলেন, চিকিৎসক হিসাবে আমি সারা বছরই নির্বাচনি এলাকায় থাকি। এখন করোনামুক্ত পরিবেশে আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানগুলোতে থাকছি। ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে।