ঋণ নেন ৫ হাজার, সুদ দেন ২ লাখের বেশি, এরপরও মহাজন বেচে দিলেন নবজাতক

৫ হাজার টাকার ঋণের জন্য প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা সুদ গুনতে হবে। ঋণ শোধ না হলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে সেই টাকা। এমন শর্তে দুই বছর আগে লাকি বেগম নামের এক নারীর কাছে থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন রানী আক্তার। আর তাতেই সুদের জালে আটকা পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন রানী ও তার স্বামী হান্নান।

রানী আক্তারের অভিযোগ, দুই বছর পূর্বে লাকী বেগমের কাছ থেকে সে ৫ হাজার টাকা ঋণ নেয়। গত ২ বছরে ওই টাকার বিপরীতে লাকী বেগমকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন তিনি। এমনকি এক বছর পূর্বে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য তার নবজাতক সন্তানকে বিক্রি করে দিয়ে সেই টাকা আত্মসাৎ করে লাকী বেগম। পরবর্তীতে গত বৃহস্পতিবার পুনরায় লাকী বেগম তার বাড়ীতে এসে আসল এবং সুদসহ ১ লাখ ৩ হাজার টাকা দাবি করে।

রানী আরও জানায়, এক বছর আগে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন তিনি। ওইদিন বিকেলে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য তার সন্তানকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় লাকী। আর বিক্রি টাকার পরিবর্তে লাকী তাকে একটি পুরাতন খাট এবং একটি পুরাতন টিভি দেয়। কিন্তু কোন টাকা দেননি।

তবে লাকী বেগম জানান, রানী তার কাছ থেকে কোন টাকা নেয়নি। সেখানে সুদের তো প্রশ্নই আসে না। তবে রানীর স্বামী হান্নান চৌকিদার বহুদিন আগে টাকা নিয়েছিল আবার পরিশোধও করে দিয়েছে।

রানীর নবজাতক সন্তান বিক্রির বিষয়ে লাকী বেগম বলেন, ‘রানীর স্বামী হান্নান আরেকটা বিয়ে করছে। রানীর কোন খোঁজ খবর নেয় না। এক বছর আগে রানীর গর্ভে সন্তান আসার পর রানী অনেকটা হতাশায় ভোগে। আমি তাকে বললাম তোর স্বামীর সাথে তো তোর এখন সম্পর্ক নাই। এই বাচ্চা কি করবি? রানী বলে আমার তো কাজ কাম কইরা খাইতে হইবো। যেহেতু সে আমার খোঁজ খবর লয় না। আফা আমি এখন কি করমু এই বাচ্চা নিয়ে। আমি এই বাচ্চা বিক্রি কইরা ফালামু।’

তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমি বলি বাচ্চা যে বিক্রি করবি কোন মানুষ ভাও টাও করছোস। তখন সে বলে আফা না কোন মানুষ ভাও করি নাই। তয় আমি বাচ্চা বেইচা ফালামু। তখন আমি বলি তোর বাচ্চা বেচবি না কি করবি হেইডা তোর বুঝ। একদিন ভোররাইতে ওর ব্যাথা উঠে। আমি পাশের বাড়ির দাই বেডি কে ডাক দিয়া আনলাম।’

‘পরে রানী বলে আফা এখন দেখেন কেউ বাচ্চা নিবো কি না। ওর বাচ্চা হয়েছে শুনে পাশের বাসার হাবিল চাচার বৌ আসছে। তখন হাবিল চাচার বৌ বলে বাচ্চা কি রাখবি? তখন রানী বলে না খালা বাচ্চা বেইচ্চা দিমু। পোলার বাপে কইছে বাচ্চা বিক্রি করে দিতে।’

‘তারপর পাশের এক ভাড়াটিয়ার কাছে ২৫ হাজার টাকায় রানী তার বাচ্চা বিক্রি করে দেয়। আমিও রানীর সাথে গিয়েছি। যেদিন বাচ্চা হয়েছে সেদিনই সে বাচ্চা বিক্রি করে দিয়েছে। হাবিল চাচার বৌসহ অনেকেই বিষয়টি জানে।’ বলেন লাকী

অভিযোগকারী রানী ও অভিযুক্ত লাকী বেগম উভয়ে ফতুল্লার আলীগঞ্জ পিডব্লিউটিএর করোনীতে ভাড়ায় বসবাস করে। এরমধ্যে রানী পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানার বাদারতলীর হান্নান চৌকিদারের স্ত্রী। হান্নান চৌকিদার রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। লাকী বেগমের স্বামীর নাম হযরত আলী। তিনি ক্লিনার পদে করেন।

এদিকে শনিবার রাতে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানা এলাকার দক্ষিণ পাশা থেকে রানীর সন্তানটিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় আটক করা হয় শিশুটিকে দত্তক নেওয়া রানু বেগম (৪০) নামে এক নারীকে। রানু বেগম মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার দক্ষিন পাশার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মিয়ার স্ত্রী।

রানু বেগম জানায়, ‘তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কিন্ত ছেলেটি প্রতিবন্ধী। তাই সে একটি ছেলে দত্তক নিতে পরিচিতজনদের বলে রেখেছিলেন। এক বছর একমাস পূর্বে শ্যামপুর আফসার করিম রোডের মৃত আয়াত আলীর স্ত্রী সুমা তাকে ফোন করে জানায় একটি বাচ্চা বিক্রি হবে। সে তখন ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাচ্চাটি ক্রয় করে। বাচ্চাটির নাম রেখেছেন ইউসুফ।’

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে লাকী বেগমের মা, বাবা ও একজন দাইসহ মোট ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। লাকী ও রানীকে মুখোমুখি করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। তবে লাকীকে এখনও আটক করা যায়নি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *