কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা

বড় ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়ার পর ঋণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোধোদয় হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন চিন্তার আলোকে ব্যাংকগুলো এখন থেকে আর ঢালাওভাবে সুদ মওকুফ করতে পারবে না।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুদ মওকুফের আগে এর যৌক্তিকতা নিরূপণ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ ছাড়া সুদ মওকুফ করা যাবে না। আরও বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ঋণ বা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া খেলাপি ঋণের সুদ কোনোক্রমেই মওকুফ করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক এই নির্দেশনার কারণও ব্যাখ্যা করেছে। বলেছে, ঢালাওভাবে সুদ মওকুফের ফলে ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সার্কুলারে ব্যাংকগুলোর প্রতি যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটাকে ইতিবাচকই বলতে হবে। বস্তুত ঢালাওভাবে সুদ মওকুফ সুবিধার ফলে ব্যাংকগুলোর আয় কমে গেছে। দুর্বল হয়েছে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি। এক হিসাবে গত ১০ বছরে ব্যাংকগুলো প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে। এমন পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিন ঢালাওভাবে সুদ মওকুফ করা হয়েছে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কিছু বিশেষ কারণে ঋণগ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই ঋণের সুদ মওকুফ করা যায়। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদীভাঙন, প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, এসব পরিস্থিতি না ঘটলেও ব্যাংকগুলো প্রায়ই গ্রাহককে সুদ মওকুফের সুবিধা দিয়েছে।

আর ঘনঘন সুদ মওকুফের সুবিধা পাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, যা ব্যাংক খাতের ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থি। ব্যাংক খাতের এই ভেঙে পড়া শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি। আমরা মনে করি, দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা সম্পূর্ণরূপে প্রতিপালিত হবে-এটাই প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *