‘কোন কোন বিষয়ে আন্দোলন করা যাবে, তার তালিকা দেওয়া হোক’

রাজধানীতে মাঠ রক্ষার প্রতিবাদ করায় আন্দোলনকর্মী সৈয়দা রত্নাকে আটকের ১৩ ঘণ্টা পর আন্দোলন না করার মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনার সমালোচনা করেছেন অধিকারকর্মীরা।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোন কোন বিষয়ে আন্দোলন করা যাবে না, তার তালিকা চেয়েছেন অধিকারকর্মীরা।

তাদের প্রশ্ন — অভিযোগ ছাড়া কোনো নাগরিককে পুলিশ তুলে নিয়ে যেতে পারে? সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি কী?

সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘তেঁতুলতলা মাঠে থানা না এলাকাবাসীকে হয়রানি ও আটকের তীব্র প্রতিবাদ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে অধিকারকর্মীরা এসব প্রশ্ন তুলেন ও ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক ছিল এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রীন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারীপক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি।

রাজধানীর পান্থপথের উল্টো দিকের গলির পাশের খোলা জায়গাটি তেঁতুলতলা মাঠ। যেখানে স্থানীয় শিশুরা সেখানে খেলাধুলা করে। ঈদের নামাজ, জানাজাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান হয় সেখানে।

গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের সেই মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েকটি শিশুকে কান ধরে ওঠবস করায় পুলিশ। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।

সম্প্রতি মাঠটি কলাবাগান থানা ভবন করার জন্য তাদের বরাদ্দ দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন।

তবে শুরু থেকেই এই মাঠ খেলার জায়গা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক কাজের রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না।

তারই ধারাবাহিকতায় রোববার থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ করায় এবং নির্মাণকাজের ভিডিও ধারণ করায় বেলা ১১টার দিকে সৈয়দা রত্নাকে আটক করে পুলিশ। পরে তার ছেলেকেও ধরে নেওয়া হয়। পরে বিক্ষোভের মুখে মাঝরাতে তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

রত্নাকে বিনা অভিযোগ আটক রাখার প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বেলার নির্বাহী সভাপতি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা আবার দেখলাম। রত্না যদি কোনো আইন ভঙ্গ করতেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু পুলিশ চাইলে তার গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে পারে এবং তার ছেলেকেও তুলে নিয়ে গেল।

মুচলেকা নিয়ে রত্মাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে বেলার নির্বাহী সভাপতি বলেন, মুচলেকার ভাষা হচ্ছে মাঠ রক্ষার আন্দোলন করা যাবে না। আমরা বলি গণতন্ত্র, আবার বলি মাঠ রক্ষার আন্দোলন করা যাবে না। তাহলে কোন কোন বিষয়ে আন্দোলন করা যাবে, তার একটা তালিকা দিয়ে দেওয়া হোক। সরকারি কাজের তালিকা দেওয়া হোক। সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আটক করে একটি মুচলেকা দিয়ে ছাড়া হয়েছে। ’

রত্না ও তার ছেলেকে আটকের ঘটনাটি পরিকল্পিত ও ওই এলাকার অন্যদের ভয় দেখানোর জন্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, জনগণের বন্ধু বলা হয় পুলিশকে। তারা যদি বন্ধুই হয়ে থাকে, তাহলে তারাই সবার আগে মাঠ রক্ষায় এগিয়ে আসার কথা ছিল।

এ সময় ধানমন্ডির শেখ জামাল মাঠটির প্রসঙ্গ টানেন তিনি।

বলেন, শহরের মাঠ দখল হয়ে যাচ্ছে। ধানমন্ডির শেখ জামাল মাঠটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারে না। সেখানে পুলিশ কোথায়, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, তেঁতুলতলা মাঠটি সংরক্ষণ করতে হবে এবং থানা নির্মাণের কাজ দ্রুত বন্ধ করতে হবে। মাঠটি রক্ষায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও রাজউককে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। পাশাপাশি সৈয়দা রত্না, তার পরিবার এবং আন্দোলনে যুক্ত এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

রোবারের ঘটনায় ১০টি আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, শিশু অধিকার রক্ষার কথা বলায় মাকে জেলে দিতে হবে? এই অবিচারের বিচারের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। তেঁতুলতলা মাঠ থেকে দ্রুত কাঁটাতারের বেড়া সরানোর দাবি জানিয়ে বলেন, প্রতিশ্রুতি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম, সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব নূর খান লিটন, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিমসহ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *