যুবলীগ নেতা, ওসি’র বিরুদ্ধে মামলার পর আত্মগোপনে সেই নারী
যুবলীগের এক নেতা ও মুগদা থানার ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলার পর নিরাপত্তাহীনতায় বাদী ভুক্তভোগী নারী এখন আত্মগোপনে। এর আগে মুগদা থানায় একই অভিযোগ এনে একাধিকবার মামলা করতে গেলেও মামলা না নেয়ায় পরবর্তীতে আদালতে মামলা করেন ওই নারী। এ ঘটনায় গত রোববার দুপুরে ঢাকার মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা করার পর থেকেই মুঠোফোনে বাদীকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করায় বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী।
এর আগে ধর্ষণ এবং পাচারের অভিযোগ এনে রাজধানীর মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জামাল উদ্দিন মীর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মো. জাভেল হোসেন পাপন, কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, মো. মোখলেছ, মো. আনিসুল বাসার রতন,
মো. জসিম, মো. কবির ওরফে মিয়াজ, মো. আলাউদ্দিন ও মোসা. আনোয়ারা বেগম আঙ্গুরীসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে তাকে বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মী কাজের কথা বলে জিম্মি করে ধর্ষণ ও পতিতাবৃত্তির কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এর আগে ভুক্তভোগী নারীকে নিষিদ্ধ যৌনপল্লী দৌলতদিয়ায় বিক্রির চেষ্টাসহ তাকে পাচার করার চেষ্টা করে।
এজাহারে বলা হয়, ভুক্তভোগী লঞ্চে করে ঢাকা আসার পথে মামলার আসামি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. জাভেল হোসেন পাপন, মো. মোখলেছ ও কবির ওরফে মিয়াজের সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর তারা অপর আসামি আনোয়ারা বেগম আঙ্গুরীর বাসায় ভুক্তভোগী তরুণীকে গৃহকর্মীর কাজ দেয়।
পরবর্তীতে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জিম্মি করে তাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতো। এ ছাড়া আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে আটকে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তির কাজ করিয়ে আসছিল।
মামলার অন্যতম আসামি আনোয়ারা বেগম আঙ্গুরী তরুণীর কথিত নানী সেজে অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় গত ২৯শে মার্চ কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, মো. মোখলেছ ও কবির ওরফে মিয়াজসহ অজ্ঞাত ২/৩ জন জোরপূর্বক পর্যায়ক্রমে তাকে ধর্ষণ করে।
পরে ভুক্তভোগী তরুণী আসামিদের জিম্মিদশা থেকে কৌশলে পালিয়ে মুগদা থানায় অভিযোগ করতে যান। এ সময় থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের ঘটনার বিবরণ জানিয়ে মামলা গ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভুক্তভোগী তরুণীর ধর্ষণ মামলা না নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন।
এবং তাকে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে থানা থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন। একইদিন ভুক্তভোগী মুগদা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করে ঘটনার বিবরণ জানান। তখন ভুক্তভোগী তরুণীকে পুনরায় মুগদা থানার ওসির কাছে পাঠানো হয়। পরে সেখানে গেলে মামলা না নিয়ে উল্টো সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে থানা থেকে বের করে দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, কাজের কথা বলে আমাকে দিয়ে বছরের পর বছর ধরে অসামাজিক কর্মকাণ্ড করিয়ে আসছে তারা। এতদিন ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। এর আগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মো. জাভেল হোসেন পাপন তাকে মিথ্যা কথা বলে দৌলতদিয়ায় নিষিদ্ধ পল্লীতে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন তাকে বিক্রি করা হয়েছে। এবং সেখানকার পরিবেশ দেখে কৌশলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
এই নারী বলেন, আমার একটি সুন্দর সংসার আছে। আমার স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আমাদের ছোট্ট একটি শিশু সন্তান রয়েছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে শান্তিতে সংসার করতে চাই। কিন্তু তারা আমাকে শান্তিতে বাঁচতে দিবে না।
আইনের আশ্রয় নিতে থানায় গেলেও পুলিশ আমাকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করেনি। মামলা করার পর থেকে মুঠোফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মামলার অন্যতম আসামি আঙ্গুরীসহ আরও অনেকেই প্রাণনাশসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করছে।
এ বিষয়ে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ঘটনার দিন আমি থানায় উপস্থিত ছিলাম না। তাকে আমি চিনি না। ওই নারী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তাদের একটি চক্র আছে যাদের কাজ হচ্ছে মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে জানা নেই বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অভিযান, গণমাধ্যম ও পরিকল্পনা) মো. হায়দার আলী খান বলেন, যে কেউ মামলা বা অভিযোগ করতেই পারেন। তদন্ত সাপেক্ষে বোঝা যাবে ঘটনা সঠিক নাকি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
থানায় মামলা না নেয়া প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, থানায় যদি মামলা না নেয়া হয় সেক্ষেত্রে সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুঠোফোন নম্বর দেয়া থাকে। সেই নম্বরে ফোন করে ভুক্তভোগী ব্যক্তি তার অভিযোগের বিষয়টি বলতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।