ভারতের ব্যাপক সমালোচনায় যুক্তরাষ্ট্র
ভারতে সরকারি পর্যায়ে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি। দেশের ভেতরকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো সরকারি পর্যায়ে হয়রানির শিকারে পরিণত হয়। নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে আছে নির্যাতনের অভিযোগ।
আছে গুরুতর মানবিক ইস্যু। বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডসহ বেআইনি এবং খেয়াল-খুশিমতো হত্যাকাণ্ড হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে ভারত অংশে এসব কথা বলা হয়েছে।
২০২১ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এতে বলা হযেছে, সরকার অথবা সরকারের এজেন্টরা বিচারবহির্ভূত হত্যার সঙ্গে জড়িত।
সেখানে নির্যাতন, নিষ্ঠুরতা, অমানবিক আচরণ করা হয় আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে। এর জন্য পুলিশ এবং কারা কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়েছে। কারাগারের পরিস্থিতিকে কঠোর এবং জীবনের প্রতি হুমকি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় বেআইনিভাবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়। মুক্ত মত ও মিডিয়ার বিরুদ্ধে আছে বিধিনিষেধ।
সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে তাদেরকে বিচার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার জন্য ক্রিমিনাল আইন ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেট স্বাধীনতায় আছে বিধিনিষেধ।
আছে লিঙ্গগত অসমতা। জোরপূর্বক এবং বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়। সরকার অনিয়ম এবং দুর্নীতির সমাধানে সচেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সরকারি সব পর্যায়ে জবাবদিহিতায় ঘাটতি আছে। এক্ষেত্রে তারা ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি পান।
বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তদন্ত হয়েছে এবং বিচার হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের দুর্বৃত্তরা এবং মাওবাদী এলাকায় মাওবাদীরা মারাত্মক আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে। নির্যাতন করেছে।
এতে সংবাদ মাধ্যম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অংশে বলা হয়, অনলাইন প্ল্যাটফরম, টেলিভিশন, রেডিও, অথবা প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যক্তিবিশেষ নিয়মিত প্রকাশ্যে এবং গোপনে সরকারের সমালোচনা করেন।
কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২১-এ বলা হয়েছে, সরকার অথবা তার কোনো পলিসির সমালোচনাকারীদের এবং মানবাধিকারের পক্ষের কর্মী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, ছাত্র, শিক্ষাবিদদের হয়রানি, গ্রেপ্তার ও বিচার করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা এবং রিপোর্ট করার কারণে সাংবাদিকদের হয়রানি ও আটকের মুখে পড়তে হয়। ফ্রিডম হাউজের ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২১ রিপোর্টে ভারতকে ‘ফ্রি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘পার্টলি ফ্রি’ বা আংশিক ফ্রি ক্যাটাগরিতে নামিয়ে এনেছে।
এর কারণ, মিডিয়ায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, নাগরিক সমাজের গ্রুপের এবং প্রতিবাদকারীরা ভিন্নমত প্রকাশ করায় তাদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন চালানো হয়। এতে বলা হয়, ১লা জানুয়ারি মধ্যপ্রদেশ পুলিশ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকি এবং অন্য চারজনকে গ্রেপ্তার করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ।
ফেব্রুয়ারিতে ফারুকির জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্পষ্ট। কৃষি সংস্কার আইনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছিল তা কাভার করছিলেন অনেক সাংবাদিক। এসব সাংবাদিকের টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়ার নির্দেশ দেয় সরকার।
বিজেপি’র একজন নেতা সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার কারণে সামাজিক অধিকারকর্মী ইরেন্দ্র লিচোম্বামকে ১৩ই মে গ্রেপ্তার করে মনিপুর পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে ফাদার জর্জ পোন্নাইয়া নামের একজন ক্যাথলিক পুরোহিতকে ২৪শে জুলাই গ্রেপ্তার করে তামিলনাড়ু পুলিশ।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, সরকার এবং তার এজেন্টরা ইচ্ছাকৃত এবং বেআইনি হত্যাকাণ্ড চালায়। এর মধ্যে সন্দেহভাজন অপরাধী এবং সন্ত্রসীরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পুলিশের হাতে আটক বন্দি এবং গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে নিরাপত্তা হেফাজতে হত্যা করা হয়েছে।
মার্চে ন্যাশনাল ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট টর্চার রিপোর্ট করে যে, ২০২০ সালে পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন কমপক্ষে ১১১ জন। ৮২ জনকে নির্যাতন করে অথবা অন্য কোনো অসদুপায়ে হত্যা করা হয়েছে। নিরাপত্তা হেফাজতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন উত্তর প্রদেশ এবং গুজরাটে। প্রতিটি রাজ্যে এমন মৃত্যুর সংখ্যা ১১।
সরকারি বাহিনী, আধাসামরিক বাহিনীর দ্বারা গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের নাসির আহমদ ওয়ানি গুম হয়েছিলেন। তার অবস্থাসহ জম্মু-কাশ্মীরে ইচ্ছুকৃত আটক, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে আবেদন করেন জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিউর।
মানবজমিন