এ যুগেও পণ্য বিনিময়!

প্রাচীনকালে মানুষ তার প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিজেরাই উৎপাদন ও ভোগ করতেন। ফলে এ সময়ে বাজারজাতকরণ অনুপস্থিত ছিল। পরবর্তীকালে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তারা পরস্পর সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে থাকেন।

এ সময় মানুষ নিজের বা পরিবারের প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অতিরিক্ত উৎপাদন শুরু করেন। সভ্যতার বিকাশে মানুষের প্রয়োজনীয় সব পণ্যদ্রব্য উৎপাদন অসম্ভব হয়ে পড়ে। উদ্ভব হয় বিনিময়প্রথা। তার পর মুদ্রাব্যবস্থার উদ্ভবের ফলে বিলীন হয়ে যায় বিনিময়প্রথা।

কিন্তু শতবছর ধরে সেই বিনিময়প্রথায় মেলা অনুষ্ঠিত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুলিকুণ্ডা গ্রামের কুলিকুণ্ডা (দ.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। সকাল থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ।

বিনিময়ের পাশাপাশি বিক্রিও করেন তারা। আলু, মরিচ, আমের কুড়ি, ডাল দিয়ে নিয়ে যান শুঁটকি। এর মধ্যে আছে বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুরি, লইট্টা, পুঁটি, গনা, গুচি, ট্যাংরা আইড়সহ নানান জাতের দেশীয় মাছের তৈরি শুঁটকি। প্রায় দুশর বেশি ধরনের শুঁটকির দোকান বসেছে মেলায়।

স্থানীয় মাছের পাশাপাশি ও সামুদ্রিক নানা বিরল জাতের মাছেরও শুঁটকি পাওয়া যায়। গত দুই বছর করোনার কারণে মেলা না বসায় এবার রয়েছে মানুষের ব্যাপক আগ্রহ। স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন শুঁটকি নিয়ে।

জানা গেছে, মেলার প্রথম দিনে ভোর ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এ পণ্য বিনিময়ের প্রথা। স্থানীয় হিন্দু জনগোষ্ঠীর লোকজন নিজেদের উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শুঁটকি ব্যবসায়ীরাও শুঁটকি বিক্রি করতে এবং কিনতে মেলায় যান।

গ্রামের লোকজন জানান, বাংলা পঞ্জিকার নিয়মানুযায়ী নববর্ষের দ্বিতীয় দিনে হিন্দুদের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে নিয়মিতভাবে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। স্থানীয় জেলেরা পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা করেন থাকে।

এ গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ বিশ্বাস আলী বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ মেলা আয়োজন করে আসছেন।

পার্শ্ববর্তী জেলা হবিগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী সুকেশ দাস বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ মেলায় আসতেন, এখন আমরাও আসি।

মেলায় শুঁটকি কিনতে আসা আবুল বাসার জানান, আমি নাসিরনগরে চাকরি করি। প্রতি বছর এখান থেকে শুঁটকি কিনে বাড়িতে পাঠাই।

সাংবাদিক ও সংস্কৃতি ব্যক্তি বরুণ কান্তি সরকার বলেন, এটি অসাম্প্রদায়িক নাসিরনগরের মানুষের ঐতিহ্য, যা শতবছর ধরে চলে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *