‘অনুমতি নিয়ে হলে আসতে হবে’- শিক্ষককে ছাত্রলীগ নেতার হুমকির অভিযোগ
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) নবীন শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে মিটিংয়ের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযান চালালে শিক্ষককে লাঞ্চিত করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তের নাম – এস এম সজীব হোসাইন। তিনি শেকৃবির কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সভাপতি।
মঙ্গলবার রাত ১২ টায় হলটির দুজন সহকারি প্রভোস্ট ও সহকারি প্রক্টর হলে আসলে ঘটনার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট হল ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এসময় সজীব দুই প্রভোস্টকে হুমকি দেন, ‘প্রক্টর স্যার পর্যন্ত হলে আসলে আমাকে ফোন দেয়। অনুমতি নিয়ে আসতে হবে হলে। ছাত্রলীগ প্রশাসনের বডি। ’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সজীব হোসাইনের বাকবিতণ্ডার ৯ মিনিট ২ সেকেন্ডের একটি রেকর্ডিং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১২ টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ডাইনিংরুমে কথিত মিটিং
করানোর সময় হল পরিদর্শনে আসেন হলটির দুইজন সহকারী প্রভোস্ট শেখ মো. মাসুম ও মো. শরিফুল ইসলাম। এসময় তারা মিটিংস্থলে প্রবেশ করেন।
এসময় এতো রাতে তারা এখানে কি করছে প্রশ্ন করেন প্রভোস্টরা।
কিছু সময় পর সেখানে হলটির ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সজীব হোসাইন আসলে প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক শেখ মো. মাসুমের সাথে তার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
প্রাপ্ত রেকর্ডিং অনুযায়ী, হল ছাত্রলীগ সভাপতি ও সহকারি প্রভোস্ট মাসুমের বাকবিতণ্ডার সময় সজীব হোসাইন বলেন, ‘হলে একটা সমস্যা হইসে, আপনি আসছেন সমাধান করতে আর আমি জানি না বিষয়টা কেমন না? প্রক্টর স্যারও হলে আসলে আমাকে ফোন দেয়। আপনি আমাকে ইনফর্ম করে হলে আসতেন। ছাত্রলীগ প্রশাসনের বডি।’
মিটিং দেওয়া ছাত্রদের কথা টেনে সহকারি প্রভোস্টের উদ্দেশে সজীব বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আসছে তারা বিএনপির মিটিংয়ে
গিয়েছিল, তারা ঝামেলা করতে চেয়েছিল। আমাকে সাথে না নিয়ে আপনি ঢোকেন কেমনে।’
কিছুসময় পর ঘটনাস্থলে আসেন সহকারি প্রক্টর রাকিবুর রহমান। তাকে বলতে শোনা যায়, ‘এমন তো না যে আমরা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
এসে কোন কাজ করছি। আমরা সবাই আমাদের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই কাজ করছি।
তোমাদের দাবি তোমাদেরকে জানিয়ে আসতে হবে। কথার কথা-গাঁজা বানিয়ে খেতে কত সময় লাগে? তোমাদেরকে খবর দিতে, আসতে আর পাকড়াও করতে কোন কিছুই থাকেনা। হল প্রশাসন তো হলে আসবেই, যদি কোন খারাপ পরিস্থিতি হয় হল প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিকে তো জানাবেই।’
সহকারি প্রভোস্ট শেখ মো. মাসুম বলেন, ‘সেদিন ক্যান্টিন ম্যানেজার জাহিদ ফোন দিয়ে বলে সে আর ক্যান্টিন চালাবে না। সেই প্রেক্ষিতে রাতে আমি ও শরিফুল ইসলাম হলে যাই। হলে ঢুকতেই ডাইনিংয়ে ছাত্রদের জটলা দেখে সেখানে যাই। রাতে যাই হয়েছে আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নিবেন।
হাতে পাওয়া রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে সংশ্লিষ্ট হল ছাত্রলীগ সভাপতি সজীব হোসাইন প্রথমে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। পরে বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন, এর কোন ভিত্তি নাই।’
শেকৃবি প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহবায়ক ও সংশ্লিষ্ট হল প্রভোস্ট প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন,‘বিষয়টা আমরা জানি। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট বা জিএস যেই হোক আমরা কার্যকরি পদক্ষেপ নেব।’