মহাসড়কের জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকা ঋণ, অতঃপর…

মহাসড়কের জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া মো. গোলাম ফারুক (৫০) নামের এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।ব্যাংক ঋণ নিতে অভিনব প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করেছেন গোলাম ফারুক ও তার এক সহযোগী ফিরোজ আল মামুন।

র‌্যাব বলছে, প্রতারক গোলাম ফারুক পেছনের তারিখে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অংশ বিশেষের মালিকানা দেখিয়ে ব্যাংকের চোখে ধুলা দিয়েছেন। রাজধানীতে একটি হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি।

র‍্যাব জানিয়েছে, ১৯৪৮ সালে সরকারের অধিগ্রহণের আগের তারিখ দেখিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কিছু অংশ ৩০ হাজার টাকায় কিনে স্ত্রীর নামে ভুয়া দলিল করেন গোলাম ফারুক। পরে ব্যাংক থেকে ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন সেই জমি বন্ধক রেখে। অভিনব এই প্রতারক ও তার সহযোগীকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তাদের গ্রেফতারের পর শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দেন র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার মঈন বলেন, সম্প্রতি মেরুল বাড্ডা এলাকায় জাল দলিল সংক্রান্ত বিরোধের কারণে একটি হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীকে নিজ জমি থেকে উৎখাত করার উদ্দেশ্যে হত্যার হুমকি দেন গোলাম ফারুক ও তার প্রধান সহযোগী ফিরোজ আল মামুন গংরা। ভুক্তভোগী আদালতে একটি নালিশি মামলার আবেদন করলে বাড্ডা থানায় মামলা হয়। সেটির তদন্তের করতে গিয়েই এই চক্র সম্পর্কে খোঁজখবর পায় র‍্যাব।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা রাজধানীর বাড্ডায় হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। এ ছাড়া মহাসড়কের জমি ক্রয়-বিক্রয় করে প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার কথাও স্বীকার করেছেন।’

কমান্ডার মঈন জানান, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গোলাম ফারুক জানিয়েছেন- ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। একটি বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধকি সম্পত্তি ছাড়াই এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করেন। বিদেশি ব্যাংকের টাকা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে ঋণ অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাকে ৭ কোটি টাকা ডিমান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সরকারি জমির মালিকানা দেখানোর ফন্দি আঁটেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ১৯৪৮ সালে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ করা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের জমির মূল মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন। সেই ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকায় জমিটি কিনে নেওয়ার চুক্তি করেন। ২০০৬ সালে তিনি স্ত্রীর নামে এই জমির ভুয়া দলিল তৈরি করেন। সরকার অধিগ্রহণ করার আগেই মূল মালিকের ছেলের কাছ থেকে জমিটি কিনেছেন বলে দলিলে উল্লেখ করা হয়।’

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, পরে ভুয়া দলিলটি ওই ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে আরও ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন গোলাম ফারুক। ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রির নোটিশ জারি করে।পরে ব্যাংক থেকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমিটি সরকারি। ২০২১ সালের এপ্রিলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মহাসড়কের জমি ব্যক্তি নামে নিবন্ধন, বিক্রয়, ব্যাংকে বন্ধক ও ব্যাংক কর্তৃক নিলামে বিক্রি চেষ্টার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।এতে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

গ্রেফতার প্রতারক গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে জমি-জমা সংক্রান্ত প্রতারণা, হত্যাচেষ্টা, এনআই অ্যাক্ট, জালিয়াতির অপরাধে রাজউকের একটি, একটি বেসরকারি ব্যাংকের চারটি এবং সাধারণ মানুষ বাদী হয়ে তিনটিসহ মোট আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *