পদোন্নতি পেতে ১৭ চিকিৎসকের জালিয়াতি
সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে প্রজ্ঞাপন জালিয়াতি করেছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. মো. মমিনুল হক। ২০২০ সালের ওই ঘটনায় বিভাগীয় মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।
তদন্তে দেখা গেছে, বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের ৫০৫ কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ীকরণের প্রজ্ঞাপনে জালিয়াতি করে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে মন্ত্রণালয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন ডা. মমিনুল।
মামলার শুনানি শেষে তাকে তার বেতন গ্রেডের নিম্ন ধাপে নামিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে। একই রকম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ইমরুল হাসান।
তিনি ২০১৫ সালে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের ২৭৬ জন কর্মকর্তার চাকরি স্থায়ীকরণের প্রজ্ঞাপনে জালিয়াতি করেছেন। ওই প্রজ্ঞাপনে থাকা ডা. আবুল বাশার মো. সায়েদুজ্জামানের স্থলে নিজের নাম প্রতিস্থাপন করে তা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে উপস্থাপন করেন।
গত রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও দুই চিকিৎসকের শাস্তির প্রজ্ঞাপন জারি করে। একই দিন বিভিন্ন অপরাধে মোট ২০ চিকিৎসককে শাস্তি প্রদান করে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। যাদের মধ্যে ১৭ জনই পদোন্নতি পেতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
বেশির ভাগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার ফল জালিয়াতির। সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় একটি বা দুইটি পত্রে পাস করলেও তারা মোট তিনটি পত্রে পাস দেখিয়েছেন।
এই ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অর্থোডন্টিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুব আলম। তিনি ২০১৩ সালের সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় শুধু ৩য় পত্রে উত্তীর্ণ হয়েও জালিয়াতির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত গেজেট পরিবর্তন করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পত্রে পাস করেছেন মর্মে তথ্য প্রতিস্থাপন করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদন করেন। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. স্বদেশ রঞ্জন সরকার ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সিনিয়র স্কেলে পদোন্নতি পরীক্ষার ফল জালিয়াতি করেছেন।
একই প্রক্রিয়ায় সিনিয়র স্কেল পরীক্ষার ফলের গেজেট জালিয়াতি করেছেন যশোর মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এস এম নাজমুল হক, মাগুরা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নাসরিন রোজী, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ইমদাদুল হক, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের অফথালমোলজি বিভাগে সংযুক্ত সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, জাতীয় নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউটের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ডা. আখতার আহমদ। একই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে গবেষণা প্রবন্ধ জালিয়াতি করেছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরীফ মুহাম্মদ গাউছুল আকবর দ্যা জার্নাল অফ চিটাগং মেডিকেল কলেজ টিচার্স এসোসিয়েশনের ২০০৬ সালের ভলিউম-১৭, নম্বর-১ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের অন্যতম লেখক মোহাম্মদ জোবায়ের-এর নামের স্থলে জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের নাম প্রতিস্থাপন করেছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজের রেডিওথেরাপি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মুকিতুল হুদা বাংলাদেশ অনকোলজি জার্নাল-এর ২০০৮ এর ভলিউম-৩, নম্বর-১ ও ২ সংখ্যায় প্রকাশিত দুটি নিবন্ধে অন্যান্য লেখকের সঙ্গে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে এইচআরআইএস-এ আপলোড করেন।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অর্থোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ডা. আখতার নমির মো. হারুনুর রশিদ দ্যা জার্নাল অফ বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির জানুয়ারি ২০১৪ এর ভলিউম-২৯, নম্বর-১ সংখ্যায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে হারুন-অর-রশিদ খান নামক একজন লেখকের নাম বিকৃত করে হারুন-অর-রশিদ বানিয়েছেন।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি এবং রংপুর মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোছা. জাহান আফরোজা খানম চাকরি স্থায়ীকরণের অসত্য তথ্য দিয়ে ২০১৬ সালে পদোন্নতি গ্রহণ করেন। ২০২০ সালে বিভিন্ন সময় এসব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত ও শুনানি শেষে গত রোববার তাদের শাস্তি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করা এসব চিকিৎসককে ৫ বছরের জন্য তাদের বর্তমান বেতন গ্রেডের নিম্ন ধাপে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।