‘সকল ধর্মের মানুষের কমন উৎসব হিসাবে প্রচার করাটা নাগরিক শান্তির জন্যে হুমকিস্বরূপ’
যে উৎসবে কোনো বিশেষ একটি ধর্মের অনুষঙ্গ বা উপাচারের আধিক্য থাকে সেটিকে সকল ধর্মের মানুষের কমন উৎসব হিসাবে প্রচার করাটা নাগরিক শান্তির জন্যে হুমকিস্বরূপ। রাষ্ট্র তা করতে পারে না।
যেমন ধরা যাক রোজার কথা। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষঙ্গ। রোজাকে সকল ধর্মের লোকেদের জন্যে কমন বা সার্বজনীন কোনো উৎসবের অনুষঙ্গ হিসাবে প্রচার করাটা অন্য ধর্মের অনুসারীদের উপর জুলুম হিসাবে পরিগণিত হবে।
এখন হিসাব কইরা দেখেন মঙ্গল শোভাযাত্রা এই রকম কিছু কিনা? যদি হয় তবে তা স্বীকার কইরা নেওয়াটা সকলের জন্য মঙ্গলের বিষয়।
–ব্রাত্য রাইসু
মিরাজ নায়েক সেই পোস্টের কমেন্টে বলেন, চীনে অনেক সমস্যা আছে। রাজনৈতিক দমন-নিপীড়ন আছে। বাকস্বাধীনতার অভাব আছে। আমেরিকায় বহু সমস্যা আছে। যখন তখন গান ভায়োলেন্সে মানুষ মরে। বর্ণবাদ আছে।
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো সমস্যামুক্ত নয়। একেক দেশের একেক সমস্যা। কিন্তু মৌলিক কিছু বিষয়ে তারা সমস্যা দূর করতে পেরেছে বলেই, উন্নতি করেছে। উন্নতি ধরে রাখতে পারছে। তেমনই এক মৌলিক বিষয় হলো যোগ্যতার ভিত্তিতে সমাজ গড়া। সমাজের সর্বত্র রাজনীতির দূষণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকে ছড়িয়ে না দেয়া।
আমেরিকায় গান ভায়োলেন্সে প্রতি বছর বিশ হাজার মানুষ মারা যায়। কিন্তু আমেরিকার ইউনিভার্সিটিতে বিশজন শিক্ষকও অনৈতিকভাবে, দলীয়ভাবে, কম যোগ্যতা দেখে নিয়োগ দেয়া হয় না। গান ভায়োলেন্স ব্যাক্তির অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে কোন ধরনের অনৈতিকতার আশ্রয় হলো রাষ্ট্রীয় অপরাধ।
ট্রাম্প ও বাইডেন সারাদিন একে অন্যকে দুষে। রাজনীতিতে ওরাও কম নোংরামি করে না। কিন্তু আপনি বাইডেনের দল করেন—এই পরিচয়ে একটা মুচির চাকরিও পাবেন না। অফিস-আদালতে গিয়ে নেতার পরিচয় দিয়ে কাজ হাসিল করতে পারবেন না। অথচ, বাংলাদেশে গিয়ে আমি দেখলাম, গ্রামের যে ছেলেটা নকল করেও মেট্রিক পাশ করেত পরেনি, সে এখন বড়ো নেতা। সমাজের হর্তা-কর্তা হয়ে বসে আছে। —এমন সমাজে আপনি কি করে সুশিক্ষা আশা করেন? এমন সমাজে আপনি কি করে অসাম্প্রদায়িকতা আশা করেন?
আমেরিকার কোন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে নেতার পোস্টারে ভরা থাকে না। জর্জ ওয়াশিংটন কিংবা আব্রাহাম লিঙ্কনের হাতে গড়া ছাত্ররাজনীতির দানবরা শিক্ষাকে ব্যহত করে না। শিক্ষকরা পড়াশুনা, গবেষণা বাদ দিয়ে ওমুক-তুমক চেতনায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত নয়। সেটা রক্ষা করার জন্য ওদের সেনাবাহিনী আছে, বিমান বাহিনী আছে। ছাত্র-শিক্ষকদের যেটা কাজ, সেটা নিয়েই থাকতে হয়। ফালতু কাজে সময় নষ্ট করার সামান্যতম সুযোগ নেই! রাজনৈতিক বিচার বিবেচনা করে, যোগ্যতায় ছাড় দিয়ে নিয়োগের সংস্কৃতি নেই কোন সেক্টরে। ফলে প্রতিটি সেক্টরে সময়ে সময়ে যোগ্যদের চেয়ে যোগ্য গড়ে উঠছে। বাপের পরিচয়, নেতার পরিচয়, দলের পরিচয়, পদের পরিচয় দিয়ে এসব দেশে মুদির দোকানির কাছেও আলাদা কোন কদর পাওয়া যায় না। এসব দেশে পদ-পদবী হলো দায়িত্ব। দায়বোধ। আলগা কোন ভাব নেয়ার বিষয় না।
চীনের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কী দলীয় ছাত্ররাজনীতির গুণ্ডামি-পাণ্ডামি দেখবেন? —দেখবেন না। আজ যে চীন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, তার কারণ হলো শিক্ষা ও গবেষণায় কোন ধরণের খামখেয়ালিপনা, হেলাফেলা ওরা করতে রাজি না। প্রতিটি রাজ্যে গবেষণার জন্য ওরা অঢেল টাকা দিয়ে ল্যাবরেটরি খুলে দিচ্ছে। শিক্ষকতার জন্য বেছে নিচ্ছে সেরাদের সেরাদেরকে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইসব দলীয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও যে এমন অশ্লীল একটা বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে আছে—এর চেয়ে লজ্জার মনে হয় কিছু নেই। ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা ছাড়া বাংলাদেশে আধুনিক শিক্ষার যাত্রা অসম্ভব! সমাজের সর্বত্র যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের সংস্কৃতি নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয়ের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বিশ্বমানের সমাজ গড়া মোটেও সহজ না।