অন্তঃসত্ত্বা মণি হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিল স্বামী

মণি আক্তার (২২)। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মণি আক্তারের পিতা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলাধীন দাঁতমারা জোর কোম্পানি চা-বাগানে সামান্য বেতনে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে দরিদ্র পিতার পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরাতে মণিও চা বাগানে দৈনিক মজুরিতে কাজ করতেন।

এর মধ্যে মোবাইল ফোনে মণি আক্তারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠে মো. সুমন (৩৫) নামে এক যুবকের। এক পর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুজনের। অতঃপর বিয়ে এবং মণি আক্তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়।

তবে বছর না ঘুরতেই গত বছরের ৩১ অক্টোবর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা মণি আক্তারকে যৌতুকের বলি হতে হয়। ওই রাতে তাকে (মণি) তার পাষণ্ড স্বামী সুমন উপজেলাধীন ভুজপুর থানাধীন কালিকুঞ্জ নামকস্থানে নির্মমভাবে হত্যা করতে মধ্যযুগীয় কায়দায় তার নির্যাতন চালায়।

এ ঘটনায় ভুজপুর থানায় মণির বড় ভাই মো. আব্বাস বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করে। ওই মামলার সূত্র ধরে ঘটনার প্রায় ছয় মাস পর র‌্যাব-৭ এর হাটহাজারী ক্যাম্পের সদস্যরা শনিবার ভোরে নগরীর বায়োজিদ থানাধীন চন্দন নগর এলাকার কলাবাগানস্থ জেডএ আবাসিক এলাকা থেকে পাষণ্ড স্বামী সুমনকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃত সুমন ভুজপুর থানার বাদুরখিল এলাকার বোছা মিয়ার বাড়ির আবুল কাশেমের পুত্র। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাষণ্ড স্বামী সুমন তার স্ত্রী মণি হত্যার নির্মম হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় বলে জানায় র‌্যাব। গ্রেফতার সুমনকে ভুজপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সুমনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৭ হাটহাজারী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত এসপি মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, সুমন প্রায় আট বছর আগে প্রথম বিয়ে এবং বছর দুয়েক আগে পুনরায় দ্বিতীয় বিয়ে করে। এদের প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে যথাক্রমে তাদের বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এসব তথ্য গোপন করে সুমন বছর দেড়েক আগে বিভিন্ন প্রকার প্রলোভন দেখিয়ে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে মণি আক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে বিয়ে করে।

তিনি বলেন, বছর না ঘুরতেই যথারীতি সুমন বিভিন্ন সময় যৌতুকের টাকার জন্য মণিকে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সংসার টিকানোর লক্ষ্যে মণির পরিবারের লোকজন সুমনকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয় এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়। এছাড়া স্বামীর যৌতুকের চাহিদা মিটানোর জন্য মণি নিজেও চা বাগানে চাকরি করত।

আসামিদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, গত বছরের ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় সুমন যৌতুকের টাকার জন্য মণি আক্তারের বাবার কর্মস্থলে আসে এবং পুনরায় যৌতুকের দাবীকৃত টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। মণির দরিদ্র পিতা টাকা দিতে না পারায় সুমন ক্ষিপ্ত হয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে বন্ধু টিপুর মোটরসাইকেলযোগে রওনা করে। এ সময় কেন যৌতুকের টাকা আনতে পারল না এই নিয়ে মোটর সাইকেলে বসেই সুমন তার স্ত্রী মণির সঙ্গে তর্কবিতর্ক ও গালিগালাজ করতে থাকে।

এক পর্যায়ে তারা ভুজপুর থানাধীন কালিকুঞ্জ নামকস্থানে আসলে মণির বাম চোখ নষ্ট করে ফেলে ও দুই হাত দুই পা মুচড়াইয়া ভেঙ্গে ফেলে এবং ইট দিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে মোটরসাইকেলের গরম সাইলেন্সার পাইপের সঙ্গে বুক চেপে ধরে পুড়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার চেষ্টা করে।

সুমন ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মণি প্রথমে নাজিরহাট সরকারি হাসপাতালে নেয় কিন্তু তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে সে আত্মগোপনে চলে যায়। এর মধ্যে দীর্ঘ ২৬ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে আট মাসের গর্ভাবস্থায় মণি না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *