প্রয়োজনে জেলে যাব, পালাব না: মন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি প্রতিদিনই বলে সরকার পালিয়ে যাবে। কোথায় পালাবে? আমাদের দেশ এই বাংলাদেশ, পালানোর ইতিহাস আমাদের নেই। প্রয়োজনে দেশের মাটিতে জেলে যাব, পালাব না।’

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগস্ট মাসের ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জরুরি সভায় তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পালানোর দল নয়, পালানোর দল তো আপনারা। আপনাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তিনি কোথায়? টেমস নদীর তীরে কিভাবে গেছেন? জরুরি সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে এখান থেকে চলে গেছেন।’

‘আপনারা স্বপ্ন দেখছেন ময়ূর সিংহাসন, সোনার হরিণ। স্বপ্ন আবারও রঙিন খোয়াবের মতো এই স্বপ্ন কর্পূরের মতো উড়ে যাবে, আওয়ামী লীগ যখন মাঠে নামবে।’

জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার ঘোষণার আগে দলীয় ফোরামে আলোচনা করেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারিভাবে এটির সিদ্ধান্ত হয়। এই বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের হেড কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী তিনি।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সারা দুনিয়ার পরিস্থিতি বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সব কিছু জেনেশুনে এটি করা হয়েছে। আমরা আগেই বলেছি বাধ্য হয়ে করেছি। নিরুপায় হয়ে করেছি। মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কোনো পথ বিকল্প কোন পথ খোলা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছেন, যখনি বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমবে, তখন আমরাও সেটি সমন্বয় করে নেব।’

আওয়ামী লীগ সরকার চারবার তেল-গ্যাসের দাম কমিয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে বিএনপি বড় বড় কথা বলে। তাদের সময়ে কী ছিল? বিদ্যুৎ ছিল না, ছিল খাম্বা। সকাল নেই, বিকেল নেই ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল, এটি কি মিথ্যা? কোন মুখে তারা আজকে বিদ্যুৎ সম্পর্কে কথা বলে?’

তিনি বলেন, ‘আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। এখন একটি পরিস্থিতি হয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে আমাদের হাতে যখন সম্ভাবনাময় সময় আসবে তখন তো আমরা আমাদের প্রমিজ থেকে পিছিয়ে যাব না। আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যাব না।’

আপনাদের জোট শরিকদের কেউ তো সরকার বিরোধী কর্মসূচি দিচ্ছে আরেক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘করুক। দলগতভাবে তাদের আন্দোলন করার অধিকার আছে। তারা করতে চাইলে করবে। আমাদের জোট তো ইলেকশন অ্যালায়েন্স। সেটি কৌশলগত জোট, আদর্শিক বিষয়ের জোট নয়।’

সরকার পতন ঘটাতে চায় তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব? বিরোধী দল হিসেবে যদি তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে তাহলে আমরা সেখানে বাধা দেব কেন? এটি তো গণতন্ত্রের বিষয়। আমরা বাধা দেব কেন? কিন্তু তারা যদি এই আন্দোলনের সঙ্গে সহিংসতার উপাদান যুক্ত করে আবারও যদি আগুন সন্ত্রাস নিয়ে মাঠে নামে তাহলে কি আমরা নীরব হয়ে বসে থাকব? আমরা কি ঘরে বসে থাকব? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আঙুল চুষবে নাকি?’

‘প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। খেলা হবে, মোকাবিলা হবে। রাজপথে মোকাবিলা হবে’ বলেও জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বারবার শুধু এই কথা বলছেন, পালানোর কথা! স্বপ্ন দেখছেন ময়ূর সিংহাসন? ময়ূর সিংহাসন, সোনার হরিণ; দিন যায় রাত যায় সপ্তাহ যায় মাস যায় বছর যায়, সোনার হরিণ; ময়ূর সিংহাসনের দেখা আজও পেলাম না। কোথায়, কবে আসবে কেউ জানে না। কোথা থেকে আসবে ময়ূর সিংহাসন? স্বপ্ন আবারও রঙিন খোয়াবের মতো, স্বপ্ন কর্পূরের মতো উড়ে যাবে, আওয়ামী লীগ যখন মাঠে নামবে।’

‘পাশাপাশি খালি মাঠে গোল হবে না। ফাঁকা মাঠে গোল হবে না’- বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

সারাবাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *