সরকারের শীর্ষ ৩ পদ নিয়ে নানামুখী তৎপরতা

সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর এই পদগুলোতে কারা আসবেন, কারা যাবেন ইত্যাদি নিয়ে সরকারের মধ্যে চলছে নানা রকম তৎপরতা মেরুকরণ।

সবচেয়ে বেশি আগ্রহ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদের মেয়াদ পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত থাকলেও তিনি বিশ্ব ব্যাংকে চাকরি নিয়ে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চলে যাচ্ছেন ওয়াশিংটনে।

সেখানে তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। আগামী ১৭ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাংকে বর্তমানে বাংলাদেশের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলমের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

তার জায়গায় ইতোমধ্যে ড. কায়কাউসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এবং সে মনোনয়ন বিশ্বব্যাংক গ্রহণ করেছে। বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে তিনি তিন বছরের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন।

তার এই যোগদানের পর প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কে হবেন এ নিয়ে সরকারের মধ্যে বিভিন্ন রকম আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আসতে পারেন।

কারো কারো মতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে আসবেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম। তবে কেউ কেউ বলছেন যে, বর্তমানে জ্বালানি সচিব মো. মাহবুব হোসেন কিংবা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে আসতে পারেন।

তবে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ছাড়া অন্য কাউকে যদি মুখ্য সচিব করা হয় তাহলে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

অনেক গুরুত্বপূর্ণ সচিবকেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে আলী আজমের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী নভেম্বর। তাকে যদি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় আনা হয় তাহলে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে।

কবির বিন আনোয়ারের চাকরির মেয়াদ শেষ যাচ্ছে আগামী জানুয়ারিতে। অন্যদিকে জ্বালানি সচিব মাহবুবের চাকরির মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে আগামী বছর।

এই বাস্তবতায় কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হবে নাকি তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব করা হবে সে নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে।

সরকারি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদও শেষ হয়ে যাচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর। এটি হলো পুলিশের সর্বোচ্চ পদ পুলিশ মহাপরিদর্শক অর্থাৎ আইজিপি। নতুন পুলিশ প্রধান কে হবেন এ নিয়েও আলাপ-আলোচনা এখন তুঙ্গে।

বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। পুলিশের প্রথা অনুযায়ী সাধারণত পুলিশের এই সর্বোচ্চ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় না। এই জন্য বেনজির আহমেদের নিয়োগ চুক্তিভিত্তিতে তার দায়িত্বের মেয়াদ বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা খুবই কম। এই আলোচনায় এখন এগিয়ে আছেন বর্তমান র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

আবার, অনেকে মনে করেন যে চৌধুরী আবদুল্লাহ মামুন একজন সৎ দক্ষ কর্মকর্তা হলেও তার চাকরির মেয়াদ আগামী জানুয়ারিতে শেষ হয়ে যাবে। যে যুক্তিতে বেনজির আহমেদকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না ঠিক একই যুক্তিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকেও হয়তো শেষ পর্যন্ত নিয়োগ নাও দেয়া হতে পারে বলে কোনো কোনো মহল মনে করছেন।

কারণ, তার চাকরি শেষ হয়ে যাবে জানুয়ারি মাসে। যদি শেষ পর্যন্ত এই দুজনের মধ্যে কেউ পুলিশ মহাপরিদর্শক না হন তাহলে পুলিশের প্রধান হিসেবে ১২তম ব্যাচের কোনো কর্মকর্তাকে দেখা যেতে পারে।

১২তম ব্যাচের যে সমস্ত কর্মকর্তার নাম পুলিশের আইজি হিসেবে আলোচনায় আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে ১২তম ব্যাচের কর্মকর্তা পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) এস এম রুহুল আমিন। সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বাহিনীতে এবং সরকারে তার সুনাম রয়েছে।

তিনি ১২তম ব্যাচের মেধাতালিকায় প্রথম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এই শিক্ষার্থীর কোনো নেতিবাচক ভূমিকা পাওয়া যায়নি। পুলিশের আইজিপি হওয়ার দৌড়ে আরো আছেন ওই ব্যাচেরই কর্মকর্তা হাইওয়ে পুলিশের প্রধান এবং অতিরিক্ত আইজিপি ড. মল্লিক ফখরুল ইসলাম।

এছাড়াও পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান এবং অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নামও আলোচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৫ তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে থাকবেন। তার আগেই হয়তো পুলিশের সর্বোচ্চ পদের চূড়ান্ত করা হবে।

আর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ ডিসেম্বর। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক চাকরীর মেয়াদ ১৫ ডিসেম্বর শেষ হবে। নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব কে হবেন, সেটি নিয়ে এখন সরকারের মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে।

এখানেও জনপ্রশাসন সচিব কে এম আলী আজম, জ্বালানি সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব চূড়ান্ত হওয়ার আগে মুখ্যসচিব চূড়ান্ত হবে এবং মুখ্যসচিব কে হচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কে হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *