রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশ সহ এ অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ২৪শে আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের দেয়া বিবৃতিতে একথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, এসব শরণার্থীর পুনর্বাসন বৃদ্ধিতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে তারা তাদের জীবন নতুন করে গড়ে তুলতে পারেন।

তবে কবে নাগাদ এবং কী পরিমাণ রোহিঙ্গাকে গ্রহণ করবে যুক্তরাষ্ট্র সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি। এতে তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করায় গাম্বিয়াকে সমর্থন দেন। ব্লিনকেন বলেন, রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের জনগণের স্বাধীনতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের সাধনায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার অগ্রগতি, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি এবং সব মানুষের মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষায় সমর্থন দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।

অ্যান্টনি ব্লিনকেন তার বিবৃতিতে বলেন, ৫ বছর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়েছিল। তারা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। ধর্ষণ করেছে।

নির্যাতন করেছে। ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা করেছে। হত্যা করেছে কয়েক হাজার শিশু, নারী ও পুুরুষকে। কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

তার ভাষায়- এ বছর মার্চে আমি যুক্তরাষ্ট্রে হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে বক্তব্য রেখেছি। এটা বলেছি, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে নৃশংসতা চালিয়েছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার শামিল।

তিনি আরও বলেছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই একই নিষ্পেষণ, নির্যাতনকারী সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটায়। তারা নগ্নভাবে হত্যা করে লোকজনকে। মিয়ানমারের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎকে নিভিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে তা করা হয়েছে।

সম্প্রতি শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রপন্থি ও বিরোধী নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। এটাই হলো সর্বশেষ উদাহরণ যে, সামরিক বাহিনী মিয়ানমারের জনগণের জীবনকে অসম্মান করে। তাদের ক্রমবর্ধমান সহিংসতা মানবিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করছে। বিশেষ করে জাতিগত, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এর মধ্যে আছে রোহিঙ্গারা।

তারা এখনো সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছেন এবং দেশটির প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তারা। অ্যান্টনি ব্লিনকেন আরও বলেন, রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের সব মানুষের পক্ষে আধুনিক বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র। তারা ভিকটিম ও জীবিতদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে।

ব্লিনকেন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং সারাবিশ্বে বিশ্বাসযোগ্য আদালতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার অভিযোগে মামলা, যেখানে মামলা চালানোর এখতিয়ার আছে, তাদের প্রতি আমরা অব্যাহত সমর্থন দেবো।

আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রমোট করার বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যেসব পদক্ষেপ নেবে তার প্রতি সমর্থন আছে যুক্তরাষ্ট্রের।

এ প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমার পরিস্থিতিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে স্থানান্তর করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে। তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে এবং সহায়তার পথ তৈরির আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের নিজ বাড়িঘরে নিরাপদে ফিরে যেতে পারছেন না- এটা স্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারে সৃষ্ট এই সংকটের জন্য আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলে কমপক্ষে ১৭০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছি।

রাখাইনে সহিংসতায় যেসব জীবন ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জীবন বাঁচাতে আমরা মানবিক সহায়ক হিসেবে শীর্ষস্থানীয় একক দাতা। বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া এ অঞ্চলের অন্যদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র।

আন্তর্জাতিক, মানবিক দায়িত্ব হিসেবে আমরা বাংলাদেশ সহ এ অঞ্চলের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান পুনর্বাসনের জন্য উল্লেখযোগ্য কাজ করে যাচ্ছি, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন শুরু করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *