মধ্যরাতে বিএনপির ৪ নেতার বাড়িতে তাণ্ডব

মধ্যরাতে যশোরে বিএনপির শীর্ষ চার নেতার বাড়িতে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হামলা চালিয়ে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খানের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে।

শুক্রবার রাত দেড়টার পর থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ওই হামলায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি স্প্রাইট, সেভেনআপ, কোকাকোলার বোতলও ব্যবহার করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন দাবি করেন, আগস্ট মাস শোকের মাস। এই মাস আসলেই বিএনপির ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নিজেদের দলীয় কোন্দলের জেরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই দোষ আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।

হামলার ঘটনায় শনিবার দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা বিএনপি নেতারা। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বিএনপি যখনই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ জনগণের সব ন্যায্য দাবি এবং অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে; তখনই সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা জনতার আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এ ধরনের হামলা ও তাণ্ডব শুরু করে। ইতোপূর্বেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একইভাবে দলের নেতাকর্মীদের বাসায় হামলা চালিয়েছে কিন্তু কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসভবনের সিটি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সন্ত্রাসীরা একটি সিলভার কালারের মাইক্রোবাস, ৪ থেকে ৫টি প্রাইভেট কার এবং ১০টির অধিক মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়। এর মধ্যে একটি সাদা এবং একটি কালো রংয়ের প্রাইভেটকার ছিল। উঠতি বয়সি সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মুখে কাপড় বেঁধে হামলা শুরু করে। সন্ত্রাসীরা প্রথমে রাত দেড়টার পর ঘোপ পিলু খান সড়কে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বাসায় হামলা করে।

গেটের বাইরে থেকে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাসার জানালার গ্লাসসহ বাসায় ব্যাপক ভাঙচুর করে। গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টায় চালায়। পরে ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাসীর অনবরত ইটপাটকেলের সঙ্গে কাচের স্প্রাইট, সেভেনআপ, কোকাকোলার বোতল ছুড়তে থাকে। তাদের ছোড়া ইট-পাটকেল ও ভাঙা কাচের বোতলের টুকরোয় বাসভবনের আঙিনা ভরে যায়। তাদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে পাশের বাড়ির বেলকনিতে লাগানো এসিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বেশ কিছু সময় ধরে সন্ত্রাসীর তাণ্ডব চালিয়ে উপশহর বি ব্লকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর বাসায় হামালা চালায়। সন্ত্রাসীর গেটের বাইরে থেকে ইট-পাটকেল ও কাঁচের বোতল নিক্ষেপ করে বাসার জানালার গ্লাস ভেঙে ফেলে।

সেখান থেকে উপশহর ডি ব্লকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান খাঁনের বাসায় গিয়ে হামলা চালায়। তার বাসার সামনে রাখা মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে। গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়।

সবশেষে সন্ত্রাসীরা শহরের ধর্মতলা মোড়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকনের বাড়িতে হামলা চালায়। তার বাসায় সন্ত্রাসীরা ইট-পাটকেল ছুড়ে জানালার কাচ ভাঙচুর করে। বৈদ্যুতিক মিটার বক্স ভেঙে ফেলে। বাসার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। সন্ত্রাসীদের এমন তাণ্ডবে বাসার মধ্যে থাকা শিশু থেকে শুরু করে নারীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।

হামলার প্রতিবাদে শনিবার সকালে নগর বিএনপির ৩ নাম্বার ওয়ার্ড শাখার নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা মধ্যরাতে বিএনপি নেতাদের বাড়িতে হামলা ও তাণ্ডব চালিয়েছে। এ নিয়ে ৫ বার করে এই নেতাদের বাড়িতে হামলা চালানো হলো। কিন্তু কোনো ঘটনায়ই দোষীদের চিহ্নিত করা বা বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। তারপরও আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা মামলা করব।

এ ব্যাপারে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ডিবি ওসি রূপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, হামলা ভাঙচুরের কোনো অভিযোগ তারা পাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *