জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য টক অব দ্য কান্ট্রি
দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানের একটি বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন ইতিমধ্যে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা এ বিষয়ে পক্ষ বিপক্ষে মতামত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব রয়েছেন।
বিএনপি ও জামায়াতের এক সময়ের দুর্গ বলে পরিচিত বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও এটি নিয়ে চলছে আলোচনা। মানবজমিনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দল দু’টির তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয়। এতে দেখা যায়, দল দু’টির অনেকেই খুশি।
তাদের বক্তব্য, এভাবে দায়সারা সম্পর্ক থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। অনেকে বলছেন, জামায়াত সরকারের ষড়যন্ত্রে পা দিচ্ছে। আরেক পক্ষ বলছে, জামায়াত আমীরের বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
হাসান চৌধুরী দিপু নামে ফটিকছড়ি উপজেলার এক যুবদল নেতা বলেন, আমি মনে করি বোরকা পরে না থেকে তাদের জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া ভালো হয়েছে। তারা সঙ্গে থেকে বিএনপি’র কোনো আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না।
তাদের চলে যাওয়াতে আমরা তৃণমূলের কর্মীরা অনেক খুশি। যুবদলের প্রবাসী নেতা মীর ইরফান সাইদ বলেন, মনে হচ্ছে এটা জোটের একটা কৌশল। আর এই মুহূর্তে না হলে জামায়াত এভাবে সিদ্ধান্ত নিতো না।
জামায়াত সরকারের ফাঁদে পা দিবে সেটা আমার মনে হয় না। নগর কৃষক দলের নেতা আজম খান বলেন, জামায়াত আর বিএনপি দীর্ঘ সময় একসঙ্গে পথ চলেছে। বিশ দলীয় জোট থেকে জামায়াতের প্রস্থানকে রাজনৈতিক এবং আগামী নির্বাচনী কৌশল হিসেবেই দেখি।
আশা রাখি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে। মোহাম্মদ আবুল কাশেম নামে জামায়াতের স্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘জামায়াত বিএনপি’র জন্য এতকিছু করলো।
আর তাদের নাকি এখন জামায়াতকে সঙ্গে নিতে লজ্জা লাগে। তাহলে তারা তাদের মতো থাকুক। আমরা আমাদের মতো থাকি। বন্ধুত্বের পরিচয় দিতে যারা সংকোচ করে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিন্ন করার ঘোষণাটা ভালো হয়েছে।’
এহসানুল করিম মঞ্জু নামে জামায়াতপন্থি এক পেশাজীবী নেতা বলেন, এটা আমীরে জামায়াতের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। জনশক্তিদের মনের কথা বোঝার জন্য উনাকে মোবারকবাদ জানাই। তবে জোট না থাকলেও আশা করছি লিয়াজোঁ থাকবে।
শহিদুল ইসলাম নামে শিবিরের এক কর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ থেকে আর কোনো জোটে নাই। একক শক্তিতেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে পথ চলা শুরু।’
চট্টগ্রাম আদালতের জামায়াতপন্থি আইনজীবী মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ বলেন মেরুদণ্ডহীন বিএনপি’র সঙ্গে থেকে জামায়াতের স্বকীয়তা নষ্ট করার দরকার নেই। জামায়াত একটি ইসলামী শক্তি। তাদের তাই উচিত ইসলামী শক্তির সঙ্গে থাকা।
দেশে কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রীক যে দলগুলো আছে তাদের সঙ্গে জোট করা দরকার। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটা আমীরে জামায়াতের কোনো অফিসিয়াল বক্তব্য না।
আর মনে হচ্ছে একটা ঘরোয়া বিষয়ে বিশেষ কোনো প্রেক্ষাপটে উনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। এ কারণে আমরা এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের দলের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি।
মনে হচ্ছে এটা জামায়াতের একটা কৌশল। দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে তো তারা ছিল। হয়তো তারা নতুন করে কিছু ভাবছে। আর এটা একান্ত তাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।
জামায়াত না থাকার কারণে বিএনপি’র বর্তমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের আলোচিত সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল।
আমাদের বিশেষ কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার কথা নয়। এই দেখেন, সারা দেশে এখন ইউনিয়ন পর্যায়েও এককভাবে মিছিল সমাবেশ করছি। হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নিচ্ছে।
তবে হ্যাঁ, বিভক্তি তো আসলে ভালো না। দেশ জাতির স্বার্থে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ বিরোধী সব শক্তির এখন ঐক্য দরকার। সরকার তো এই ঐক্যে ফাটল ধরাতে চায়।