বিএনপি’র কর্মসূচিতে বাধা হামলা, সংঘর্ষ

দেশব্যাপী বিএনপি’র বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলা অব্যাহত রয়েছে। খুলনায় বিএনপি’র অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪৫ জন।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিএনপি অফিসে চালানো হয়েছে হামলা। বরিশালে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে দেয়া হয়েছে ১৪৪ ধারা।

সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, সোনাইমুড়ীতে বিএনপি’র প্রতিবাদ সভাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে পৌর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন সাংবাদিক ও পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৪৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রোববার থানার এসআই শাহ আলম বাদী হয়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোতাহের হোসেন মানিক, আনোয়ারুল হক কামালসহ এজাহারনামীয় ৯৫ ও অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে পৌর শহরে অবস্থান নিয়ে শনিবার সকাল থেকেই মিছিল ও সমাবেশ অব্যাহত রাখে।

অপরদিকে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোলায় বিএনপি’র ২ নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয় সোনাইমুড়ী উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন।

বিকাল ৩ টার প্রতিবাদ সমাবেশকে সফল করতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকে। বিকাল ৪টার দিকে সোনাইমুড়ী চৌরাস্তা থেকে বিএনপি’র একটি বিক্ষোভ মিছিল স্কুল রোড হয়ে বাজারে প্রবেশ করে রেলগেটের মুখে গেলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে পৌর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ সংঘর্ষে একজন সাংবাদিক, পুলিশসহ উভয় দলের অন্তত ৪৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এ সরকারের জনগণের প্রতি দয়া মায়া নেই। জনগণের ন্যায্য দাবি না মেনে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে আমাদের ২০/২৫ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে।

আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। নেতৃবৃন্দ বলেন, যতই হামলা মামলা করেন, বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, এই আন্দোলন পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ.ফ.ম বাবুল বাবু জানান, আমাদের ডাকা সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল। হঠাৎ বিএনপি’র উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের হামলায় আমাদের ছাত্রলীগ নেতা রেদোয়ান ও সবুজসহ ১৫/২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পরবর্তীতে আমাদের ধাওয়া খেয়ে তারা পালিয়ে যায়।

সোনাইমুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশিদ বলেন, বিএনপি সমাবেশের ডাক দিলেও তাদের কোনো ব্যানার বা মঞ্চ ছিল না। হঠাৎ বিকাল ৪টার দিকে তারা বাজারে প্রবেশ করে হাউকাউ শুরু করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পুলিশ উভয় পক্ষকে দুই দিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের ডিউটিরত একটি পুলিশ ভ্যান ও একটি সিএনজি ভাঙচুর করা হয়, এতে আমাদের কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের বৈকালীতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সমাবেশ করতে পারেনি বিএনপি। উল্টো সেখানে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দেয়ায় পুলিশ উভয় পক্ষের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

এ ঘটনার জের ধরে শনিবার সন্ধ্যায় খালিশপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি’র কার্যালয় ও দলটির নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হামলায় বিএনপি’র অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

খালিশপুরের ৭, ১০, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাস্তুহারা কলোনিতে বিএনপি’র কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

শনিবার রাতে নগরীর কেডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে মহানগর বিএনপি’র নেতারা প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেছেন, খালিশপুরের বৈকালীতে বিএনপি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে পারেনি।

আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিএনপি’র গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, খালিশপুর থানা বিএনপি’র কার্যালয়সহ বিভিন্ন ওয়ার্ড কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় খালিশপুর থানা বিএনপি’র অফিসসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

তারা বিএনপি নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হোসেন হিল্টন, মুহসিন কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক শিমুল, ছাত্রদল নেতা মশিউর রহমান রুবেলের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র মিছিলে হামলা চালিয়েছে। ১২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র মিছিল থেকে উজ্জ্বল নামে যুবদলের এক কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র মিছিলে হামলা চালিয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ শামীম ও যুবদলের কর্মী সুমন হাওলাদারকে কুপিয়ে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী শহিদুলকে পিটিয়ে জখম করেছে।

একইসঙ্গে যুবদলের কর্মী সাইফুল ও সাগরকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ৭, ৯, ১০, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র কার্যালয় ভাঙচুর, বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।’ এসব ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে বিএনপি’র নেতারা বলেছেন, পুলিশ শাসকদলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, চিত্রালী বাজারে বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তাণ্ডব চালিয়ে লুটপাট করেছে। শাসকদলের ক্যাডাররা ৭, ১০, ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। বাস্তুহারা ইউনিট বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও বোমা হামলা করেছে। শাসকদলের সন্ত্রাসীরা খালিশপুর থানার প্রতিটি ওয়ার্ডে ত্রাসের রামরাজত্ব চালিয়েছে।

অবিলম্বে শাসকদলের শীর্ষ নেতারা যদি ছাত্রলীগ যুবলীগের লাগাম টেনে না ধরে তবে পরিণতি শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সন্ত্রাসীদের প্রাতিহত করা জন্য বিএনপি’র নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছেন যেকোনো ধরনের পরিস্থিত মোকাবিলা করার জন্য।

পুলিশ প্রশাসনে উদ্দেশ্যে তারা বলেন, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিপক্ষে যারা ভূমিকা রাখছেন এমনকি পুলিশের পোশাক পড়ে শাসকদলের ক্যাডারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করছেন তাদেরকেও চিহ্নিত করা হচ্ছে। একদিন তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, শান্ত খুলনাকে আমরা অশান্ত করতে চাই না।

ভবিষতে কোনো ধরনের অপ্রতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায়ভার শাসকদল ও পুলিশকে বহন করতে হবে। অপরদিকে খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করা হয়েছে। খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিকালে বৈকালীর মোড়ে একই স্থানে একই সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি পুলিশ।

দুই পক্ষকেই বুঝিয়ে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খালিশপুরে ঝটিকা মিছিল বের করে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। বিএনপি’র মিছিল পিপলস মোড়ে এলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে ৩-৪ জন সামান্য আহত হয়েছেন বলেন তিনি জানান। এ সময় একটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয় বলে জানান ওসি।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিএনপি এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে। হামলায় কলাপাড়া পৌর বিএনপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন (৪৫) ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. জসীম উদ্দিন (৪২) আহত হয়েছেন।

পৌর বিএনপির সভাপতি গাজী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভোলায় পুলিশের হামলায় দুই নেতা নিহতের প্রতিবাদে গতকাল কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে তারা দলীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা করছিলেন। এ সময় মিছিল নিয়ে ৫০-৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল রামদা, লাঠিসোটা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা দলীয় কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, ফ্যান, টিভিসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করেছে। হামলায় বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী হুমায়ুন সিকদার বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের বেশির ভাগই অচেনা ও বহিরাগত বলে মনে হয়েছে। পুলিশের সামনেই তারা হামলা করেছে। হামলার সময় তারা বিএনপির নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেনসহ উপজেলার জ্যেষ্ঠ নেতাদের নাম ধরে অকথ্য গালিগালাজ করেছে। কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি যাতে না করি, সে জন্য হুমকি দিয়েছে।’

হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগ জড়িত নয় দাবি করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার বলেন, ‘কে বা কারা এ হামলা করেছে, তা জানি না। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। যদি বিএনপির নেতারা সুনির্দিষ্টভাবে হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ কর্মীদের নাম বলতে পারেন, তাহলে আমরা অবশ্যই জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম জানান, বিএনপি অফিসের হামলা হয়েছে আমরা শুনেছি, বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের কিছুই জানানো হয়নি এবং কোনো অভিযোগ দেয়নি, অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একই স্থানে একই সময়ে কর্মসূচি পালন করার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি এড়াতে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। শনিবার রাতে এই গণবিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়।

কাপ্তাই উপজেলা সদরে বিএনপি এবং কাপ্তাই উপজেলার ৫নং ওয়াগ্‌গা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও উপজেলা ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতৃবৃন্দ একই জায়গায় সমাবেশ ডাকাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল উপজেলা সদর বড়ইছড়ি এলাকায় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়াসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি’র ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কাপ্তাই উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

অন্যদিকে, একই স্থানে একই সময়ে কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে তারেক জিয়ার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। তাই দুইটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের আহুত কর্মসূচির কারণে জনজীবনে অসুবিধা ও উপজেলার স্বাভাবিক শান্তিশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ারসমূহ সম্ভাবনা ও আশঙ্কা রয়েছে। কাপ্তাই থানার ওসি জসিম উদ্দিন জানান, যেকোনো নাশকতা, দাঙ্গা হাঙ্গামা ও অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধ করতে এবং শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে পুলিশ মাঠে থাকবে।

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, বরিশালের বাকেরগঞ্জ ও মেহেন্দিগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ দাবি করেছে।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান বলেন, গতকাল বাকেরগঞ্জ শহরের তুলাতলা সেতুতে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করা হয়। ওই সভা সফল করার জন্য শনিবার বিকালে গারুরিয়া ইউনিয়নের হেলেঞ্চা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে বিএনপির সভা চলছিল। বাকেরগঞ্জ শহর থেকে ১৫-২০টি মোটরসাইকেলের বহরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের একদল নেতাকর্মী দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে হামলা করে। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর করে সভা পণ্ড করে দেয়। এতে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হারুন অর রশিদ জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। হামলায় তিনিসহ ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মতলেব খান (৬০), বিএনপি নেতা মাহফুজ গাজী (৩৪), তোজম্বর হাওলাদার (৬০), স্বেচ্ছাসেবক দলের টিটু গাজী (৪০), ছাত্রদলের সজীবসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন।

ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাকেরগঞ্জে বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত। তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। বাকেরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলাউদ্দিন মিলন জানান, হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওদিকে মেহেন্দিগঞ্জে শনিবার রাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলার পাতারহাট বন্দর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সাবেক সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ জানান, বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত গতকালের কর্মসূচির প্রস্তুতি গ্রহণ করে উপজেলা বিএনপি। একই স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সন্ধ্যায় হামলা চালায়। হামলাকারীরা আমাদের সভাস্থল রাজলহ্মী সিনেমা হলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ করে। তারা উপজেলা বিএনপি সভাপতি রফিকুল ইসলাম লাবুর ফার্মেসী, পৌর বিএনপি নেতা বাদশা আলমের দোকানে, দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানকে মারধর করে, পৌর বিএনপির সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী দিনুর বাড়িতে হামলা ও উপজেলার সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন দিপেনের বাসায় হামলা করেছে।

অভিযুক্ত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ভুলু বলেন, আমরা কারও ওপর হামলা করিনি। মিছিল করে সিনেমা হলের সামনে থেকে আসার সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। তারা যে অভিযোগ করছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছে।

মেহেন্দিগঞ্জ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, হামলা ভাঙচুরের কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিএনপির এক নেতার বাসার একটি গ্লাস ভেঙেছে বলে জেনেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *