বিএনপি নেতার উপর হামলা করতে আসা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ঠেকিয়ে তাড়িয়ে দিল স্থানীয় জনতা
উত্তপ্ত যশোরের রাজপথ। হামলা-পাল্টা হামলা আর মামলায় নাকাল বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকাল ৪টার দিকে শহরের ব্যস্ততম দড়াটানায় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়ি ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা।
পুলিশের সামনে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়। এর পরপরই ওই সন্ত্রাসীরা যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে অবস্থান নিয়ে নানা রকমের উস্কানি ছড়াতে থাকে। এ সময় প্রেস ক্লাব যশোরে আটকা পড়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মী।
যারা গত পরশু রূপদিয়ায় হামলা মামলার ঘটনায় প্রেস কনফারেন্স করার জন্য আগে থেকেই প্রেস ক্লাবে অবস্থান করছিল। শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি মন্তব্য আর নানা প্রকারের উস্কানির কারণে সংবাদ সম্মেলন না করেই বিএনপি’র নেতকর্মীরা অনেকটা নীরবে প্রেস ক্লাব ত্যাগ করে।
এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় টহল দিতে থাকে। এদিকে বিকাল ৫টার দিকে শহরের লালদীঘী পাড়াস্থ জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ করেন জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ।
একই সময় বিএনপি’র সাবেক মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলামের ঘোপের বাসা ঘিরে প্রধান ফটকের বাইরে থেকে একদল যুবক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় হামলাকারীরা বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
তারা অমিতকে হত্যার হুমকি দেয় বলেও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জানায়। এ সময় বাড়ির ভেতরে অমিত স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে সকাল থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত যশোর শহরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও হামলা পাল্টা ঘটনার বর্ণনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
শনিবার যশোর সদর উপজেলার কচুয়ায় একটি কর্মী সভায় যোগদেন বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। সভা শেষ করে অমিতের গাড়িবহর রূপদিয়া বাজারের কাছে পৌঁছালে স্থানীয় নরেন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাজুর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হামলা করে।
এই ঘটনায় স্থানীয়রা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রতিরোধকারীরা হামলাকারীদের তাড়িয়ে রূপদিয়া বাজার ছাড়া করে দেয়। এ সময় চেয়ারম্যান রাজু তার গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায়। প্রতিরোধকারীরা এ সময় চেয়ারম্যানের গাড়িটি ভাঙচুর করে।
এই হামলা পাল্টা হামলার ঘটনায় বলরামপুর গ্রামের এস এম হোসেনের ছেলে ফারুক হাসান বাদী হয়ে জেলা বিএনপি’র নেতা গোলাম রেজা দুলু, চৌধুরী রফিকুল ইসলাম মুল্লুক চাঁদসহ ৫৪ জনকে আসামি করে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করে।
ওই মামলায় অজ্ঞাত আরও ২ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে গতকাল মামলা হলেও তার আগের রাতেই ওই গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপি’র ২৮ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল বেলা ১২টার দিকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত সকলের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় বিএনপি নেতা অমিতসহ জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতের কার্যক্রম শেষে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত গাড়িযোগে বাড়ি ফেরার পথে শহরের দড়াটানায় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র লোকজন অমিতের গাড়ির গতিরোধ করে।
এ সময় অমিতকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা ওই গাড়িতে হামলা করে। মুহূর্তে হামলাকারীরা গাড়িটি ভাঙচুর করে। এ সময় পাশেই পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
পরে অমিত ভাঙা গাড়ি নিয়ে ঘোপের বাসায় ফিরে যান। এর পর পরই ওই হামলাকারীরা মিছিল সহকারে বিএনপি’র সাবেক মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলামের ঘোপের বাসায় চড়াও হয়। তারা অমিতের বাড়ি লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ওই বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তাদের ওপর চড়াও হয় এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে। প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক সাংবাদিক জানান, হামলাকারীরা অধিকাংশ সশস্ত্র অবস্থানে ছিলেন। প্রায় একঘণ্টা ধরে সন্ত্রাসীরা ঘোপ জেল রোড বাইলেনে অবস্থান নিয়ে তাণ্ডব চালাতে থাকে। খবর পেয়ে প্রায় ১ ঘণ্টা পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এদিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতা অনিন্দ্য ইসলাম অমিত মিডিয়া কর্মীদের জানান, এই হামলা পরিকল্পিত। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই টাক মিলন ও বিপুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমার গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করেছে। পরে ওই একই সন্ত্রাসীরা পার্টি অফিসে ও আমার বাড়িতে চড়াও হয়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। বাড়িঘর ও অফিস ভাঙচুর করেছে।
জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, যশোরের রাজনীতিতে একটা ভিন্ন ধরনের কালচার চালু করেছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। তারা পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের নেতা অমিতের ওপর হামলা করেছে।
তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। বিএনপি’র জেলা কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। জেলা বিএনপি’র নেতা মিজানুর রহমান খান বলেন, শান্ত যশোরকে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা অশান্ত করে তুলেছে।
এখানে বিরাজমান দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক কালচার তারা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। যশোরে রাজনৈতিক নেতা বা দলের মধ্যে একটা সহবাস্থান ছিল। যেটা আজকের ঘটনার পর ম্লান হয়ে গেছে। আমাদের নেতা অমিতকে যারা হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেছে, তার গাড়ি ভাঙচুর করেছে তাদেরকে অবিলম্বে আটক করতে হবে।