দুধের দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়লো
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির পর এবার বাড়লো তরল দুধের মূল্য। প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম লিটারে ৭ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়েছে প্রক্রিয়াজাতকারী বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আড়ং এন্টারপ্রাইজ, প্রাণ মিল্ক, আকিজ গ্রুপের ফার্ম ফ্রেশ এবং রংপুর ডেইরির আরডি ব্র্যান্ড।
এর বাইরে সরকার পরিচালিত সমবায়ভিত্তিক কোম্পানি মিল্ক ভিটা এখনো দাম বাড়ায়নি। তবে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব সরকারের কাছে দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে গুঁড়া দুধের দামও বেড়েছে। গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা।
রাজধানীর কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার মুদি দোকান ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে দুধের দাম বাড়ার বিষয়টি জানা গেছে।
বাজারে বিক্রি হওয়া বেসরকারি খাতের ৩টি কোম্পানির পাস্তুরিত তরল দুধের প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্য যাচাই করে দেখা গেছে, তারা নতুন দাম নির্ধারণ করেছে প্রতি লিটার ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এই দাম আগের চেয়ে ৭ থেকে ১০ টাকা বেশি।
এ নিয়ে ৪ মাসে তরল দুধের দাম লিটারে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। এর আগে গত মে মাসে এসব বেসরকারি কোম্পানি তরল দুধের দাম লিটারে ১০ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছিল।
মোড়ক যাচাই করে দেখা গেছে, আড়ং ব্র্যান্ডের উৎপাদিত এক লিটার পাস্তুরিত তরল দুধের খুচরা দাম লেখা আছে ৯৫ টাকা।
দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি ৭ টাকা। গত মে মাসে বাজারে একই দুধের দাম ছিল ৭০ টাকা। হাফ লিটার ৫২ টাকা। ২০০ মিলি ২৫ টাকা। ২৫০ মিলি ৩২ টাকা। এর মধ্যে কেউ ২৫০ মিলি ৪টি প্যাকেট কিনলে তাকে ১২৮ টাকা গুনতে হবে।
শুধু আড়ং নয়, প্রাণ, আকিজসহ অন্য কোম্পানিও তরল দুধের দাম বাড়িয়েছে। বাজারে প্রাণের যে তরল দুধ পাওয়া যায়, তাতে দাম লেখা ছিল প্রতি লিটার ৯০ টাকা। তবে ৫০০মিলি বা হাফ লিটার কিনলে ৫০ টাকা খরচ করতে হবে একজন গ্রাহককে। আকিজ গ্রুপের ফার্মফ্রেশ ব্র্যান্ডের দুধের দামও একই, প্রতি লিটার ৯০ টাকা রাখছিলেন বিক্রেতারা।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল জানান, গো-খাদ্যসহ আনুষঙ্গিক পণ্য মূল্যবৃদ্ধির কারণে খামারিদের দুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে খুচরা দোকানি ও পাইকারি পর্যায়ে বিপণনকারীদের মুনাফার হারও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।
এ কারণে দুধের দাম বাড়াতে হয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলোও একই কথা উল্লেখ করে বলেছেন, দুধ উৎপাদনের বিভিন্ন কাঁচামাল ও প্যাকেজিং উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বর্ধিত মূল্য সমন্বয় করতে তারা দুগ্ধজাত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওদিকে সরকার পরিচালিত সমবায়ভিত্তিক কোম্পানি মিল্ক ভিটা এখনো দাম বাড়ায়নি। তবে মিল্ক ভিটা দুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। প্রতি লিটার পাস্তুরিত তরল দুধে ৫ টাকা বাড়াতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে গত জুনে এ কোম্পানি দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটারের প্যাকেট ৮০ টাকায় নির্ধারণ করেছিল।
মিল্ক ভিটার আধা লিটারের প্যাকেট বিক্রি হয় ৪৫ টাকায়। এখন মিল্ক ভিটার ১ লিটার দুধের দাম ৮৫ টাকা, আধা লিটার ৪৫ টাকা এবং ২০০ মিলিলিটার ২০ টাকা। মিল্ক ভিটার শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। বাজারের বাস্তবতার নিরিখে দাম সমন্বয়ের এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সরকারের সবুজ সংকেত পেলেই তারা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবেন।
এদিকে গুঁড়া দুধের দামও সম্প্রতি বেড়েছে। প্রতি কেজি ডানো এবং ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারে এখন আরলা ফুডসের গুঁড়া দুধের এক কেজির প্যাকেটের দাম ৮৫০ টাকা। গত জুনে দাম প্রতি কেজি ৮০০ টাকা ছিল।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদর মনিটরিং বিভাগ জানিয়েছে, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গুঁড়া ডানো দুধ সর্বনিম্ন ৭৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও যা ৭৫০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়।
টিসিবি’র মূল্য তালিকা অনুযায়ী, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড) ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি গুঁড়া দুধ ৭৬০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যার দর এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫০-৭৮০ টাকা।
তবে এ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ফ্রেশ ও মার্কস ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের বাজারদর গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত আছে। ফ্রেশ ব্র্যান্ডের দুধ ৬৯০ থেকে ৭০০ টাকায় এবং মার্কস ব্র্যান্ডের দুধ ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।
এক বছর আগে এর বাজারমূল্য ছিল ৫৬৫ থেকে ৫৯০ টাকা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সাব্বির রহমান বলেন, বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। ওর জন্য বাধ্যতামূলক দুধ কিনতেই হয়। আমরা তো কিছুটা কম খেয়ে থাকতে পারি। কিন্তু বাচ্চাকে তো মানানো যায় না। তাকে খাবার দিতেই হবে।
নিত্যপণ্যের চড়া দামের মধ্যে দুধের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের মতো পরিবারের ব্যয় আরও বাড়ালো। খামারিরা জানান, খামার পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ খামারি ব্যবসায়ী ও সমিতির নেতাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে রাখায় তারা কোম্পানি নির্ধারিত দামের চেয়েও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।