জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশে গুমের তদন্ত?
বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, স্বাধীন দেশে গুম হওয়া পরিবারের আহাজারি দুর্ভাগ্যজনক। শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছর ধরে আমাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই আর্তনাদ আহাজারি কতোদিন চলবে? সারা দেশে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা ভয় দেখিয়ে গুম করে, খুন করে রাষ্ট্র চালাচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধন সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের উদ্যোগে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
গুম হওয়া শতাধিক পরিবারের সদস্যরা এতে অংশ নেন। তাদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের সামনে যারা বসে আছে তারা কেউ আমাদের সহকর্মীর সন্তান, কেউ সহকর্মীর ভাই, বোন কিংবা মা।
একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে তারা অধিকার নিয়ে বাস করতে চেয়েছিল। সরকার তাদের অধিকার হরণ করেছে। বাংলাদেশে কোনো সময় গুম দিবস পালন করতে হবে এটা অবিশ্বাস্য ও মানুষের কল্পনার বাইরে।
বিএনপি’র মহাসচিব আরও বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কিছুদিন আগে দেশে এসেছিলেন।
তিনি সরকারের মন্ত্রীদের বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুমের ঘটনা ঘটছে। এসবের নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হওয়ার জন্য স্বাধীন কমিশন দরকার।
কমিশনার আরও একটি কথা বলেছেন, সেনাবাহিনীর যারা জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে, এই কর্মকর্তাদের কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত কিনা তা দেখা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার পরিষ্কারভাবে তার প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
আর আমাদের সরকার প্রচার করছে, তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে কিছু বলেননি। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। সরকার যে এত মিথ্যাচার করে তার জন্য উনাদের বিশেষ নোবেল পুরস্কার দেয়া উচিত।
নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে গুম-খুনের তদন্ত করার দাবি জানান তিনি। আমাদের পরিস্কার কথা, গুম-খুনের ঘটনা জাতিসংঘের অধীনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে।
বিএনপি’র আন্দোলনে সরকার ভয় পেয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, আন্দোলন দেখে সরকার ভয় পেয়ে গেছে, তাই আবার লাঠিয়াল বাহিনী নামিয়ে দিয়েছে। দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। সবাই এগিয়ে আসুন দেশ রক্ষার জন্য। এসময় আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারের পতন ঘটানোর আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত আছে তারা কিন্তু চিহ্নিত হয়ে গেছে। দেশে চিহ্নিত হয়েছে, বিদেশেও চিহ্নিত হয়েছে।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের এই গুম-খুনের কারণে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আপনারা বিশ্বের কাছে এ দেশকে ছোট করেছেন।
তিনি বলেন, যারা গুম হয়েছে তাদের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজনের কান্না থামবে না, যতদিন না এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটাতে না পারি। যারা এই গুম, খুনের সঙ্গে জড়িত, তারা রেহাই পাবেন না। দেশের মাটিতে রেহাই পাবেন না।
বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন, সেখানে গিয়েও রেহাই পাবেন না। আপনাদের বিচার দেশের মাটিতে হবে এবং বিদেশের আদালতেও হবে। তিনি আরও বলেন, যারা গুম, খুনের শিকার হয়েছেন তাদের ছেলেমেয়ে, স্বজনদের কান্না শুনেছি, অনেক রক্ত দিয়েছি। এই সরকারের পতনের জন্য যদি আরও রক্ত দিতে হয় দেবো। তবুও এই সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে দেবো না।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদ, ঢাকা উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালাম,
ঢাকা উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, ‘গুম হওয়া’ ছাত্রদলের সাইফুর রহমান সজীবের বাবা শফিকুর রহমান, পারভেজ রেজার মেয়ে হৃদি, সেলিম রেজা পিন্টুর বোন নদী,
সোহেলের মেয়ে সাফা, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি প্রমুখ। ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত মানববন্ধনে বিএনপি’র অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। এ সময় সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। মানববন্ধনে গুম হওয়াদের ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্বজনরা আবেদন জানান। মানববন্ধন শেষে গুম হওয়া পরিবারের সঙ্গে দলীয় কার্যালয়ে একান্তে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল।