এবার আন্দোলনের সুনামি হবে: বিএনপির আন্দোলন পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এলো
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবার মামলা-হামলা করে আন্দোলন দমানো যাবে না। আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
কারণ আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের লক্ষ্য বিজয়। সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেখানে যে বাধা আসবে তা প্রতিহত করেই এগিয়ে যাব। জনগণের স্বতঃস্ফ‚র্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ওইসব দুর্বৃত্ত পালিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এবার আন্দোলনের সুনামি হবে। জনগণের উত্তাল তরঙ্গ এবার আন্দোলনের সুনামি তৈরি করবে। সেই সুনামিতে সরকার ভেসে যাবে। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মির্জা ফখরুলের উত্তরার বাসায় এ সাক্ষাৎকার নেন যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার হাবিবুর রহমান খান।
আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য, ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ, দলের সাংগঠনিক অবস্থা, দেশের অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৯৪৮ সালে ঠাকুরগাঁওয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর যোগ দেন ভাসানী ন্যাপে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিম দিনাজপুর থেকে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা কলেজে অর্থনীতিতে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ১৯৮৯ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় হন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সঙ্গে। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বিএনপির টিকিটে সংসদ নির্বাচনে হেরে গেলেও ২০০১ সালে ঠাকুরগাঁও থেকে নির্বাচিত হন।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের প্রথমে কৃষি ও পরে বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর দলের ৫ম কাউন্সিলে তাকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। ২০১১ সালের মার্চে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর তিনি মহাসচিব নির্বাচিত হন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে। শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতিতে সামনে থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মির্জা ফখরুল।
যুগান্তর : ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দীর্ঘ এ সময়ে দলটি জনগণের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছে। সাফল্য ও ব্যর্থতা কী। বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন?
মির্জা ফখরুল : বিএনপির জন্মই হয়েছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ওই সময় একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে দেশকে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। তার সময়েই রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করতে শুরু করে। এমনকি শেষের দিকে শেখ হাসিনাকেও দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন তিনি। উনার শাহাদতের পরে দলে নানা সংকট গেছে।
সেই সংকটময় মুুহূর্তে খালেদা জিয়া এ দলের হাল ধরেন। প্রতিষ্ঠাকালীন যারা সদস্য ছিলেন তাদের সহযোগিতায় তিনি দলকে ধীরে ধীরে একটা জায়গায় নিয়ে আসেন। দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেন তিনি। আসলে ওই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বিএনপির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে পেরেছে। একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ’৯১ সালে এককভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিএনপি। গণতন্ত্রকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার যে কাজ জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন তা বাস্তবায়নে হাত দেন খালেদা জিয়া। মুক্তবাজার অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে একটা ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। আজকে সরকার উন্নয়নের যে ঢাকঢোল পেটাচ্ছেন সেই অর্থনীতির ভিত্তিটা তৈরি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। পরে খালেদা জিয়া মুক্তবাজার অর্থনীতি, বহুদলীয় গণতন্ত্র, গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এগুলোর মধ্য দিয়ে তা টেনে নিয়েছেন।
’৯৬ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। কিন্তু এতকিছুর পরও বিএনপি ১১৬ আসন পায়। এখানেই বিএনপির সাফল্য। এ দলটি সব সময় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজে করে যাচ্ছে। জনগণের মতকে সব সময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ যখন আন্দোলন করে শুরুতে বিএনপি তা মেনে নেয়নি। কিন্তু পরবর্তী গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত করে। এর ফলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা অনেকটা দূর হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্য পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ আন্দোলনের নামে দেশে একটা অরাজকতা তৈরি করে যার ফলে ২০০৭ সালে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে। পরে ওই সরকার অবৈধভাবে দুই বছর ক্ষমতায় থাকে। তাদের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মূল লক্ষ্যই ছিল দেশে যাতে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ওই নির্বাচনের পর থেকে দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে।
শুধু তাই নয়, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে মামলা-হামলার পথ বেছে নেয়। কিন্তু এত নির্যাতনের পরও বিএনপি টিকে আছে। আমাদের নেত্রী অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে তারপরও দল অনেক শক্তিশালী। এখানেই বিএনপির সফলতা। নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে আগ্রহী করতে বিএনপির নানা পরিকল্পনা রয়েছে।
যুগান্তর : আপনারা বলছেন শেখ হাসিনার অধীনে ভোটে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সরকার বলছে সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন। আপনাদের দাবি আদায়ে নিশ্চয়ই কঠোর আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই পরিকল্পনা কী এবং আন্দোলনে সফল হওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী।
মির্জা ফখরুল : আওয়ামী লীগ যখন বুঝতে পারে জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। তখনি তারা সংবিধান থেকে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে নেয়। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। এই সুযোগটা নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডকে সীমিত করে দেওয়া হয়। বেছে নেওয়া হয় নির্যাতন ও গুম। দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা জানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এজন্যই তারা যেনতেনভাবে একটা নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই বিরোধী দল যাতে আন্দোলন তৈরি করতে না পারে সেজন্যই ফের শুরু হয়েছে হামলা-মামলা। বিরোধীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়া হবে না প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশের পর হামলা আরও বেড়ে গেছে।
তার কথাবার্তা মনে হচ্ছে তিনি সর্প হয়ে দংশন করেন ওঝা হয়ে ঝাড়েন। তার মন্ত্রী নেতারা আরও একভাগ বাড়িয়ে মাঠ দখলের হুমকি দিচ্ছেন। তবে আমাদের নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিরোধ করছে। সাংগঠনিকভাবে বিএনপি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। জেলা, উপজেলা, মহানগর এমনকি ইউনিয়ন ইউনিট পুনর্গঠনের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অঙ্গসংগঠনগুলো নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে কতটা শক্তিশালী তা তৃণমূলে চলমান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ঢলই বলে দিচ্ছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে আগের চেয়ে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বহুগুণ বেড়ে গেছে। এসব আন্দোলনে সাধারণ জনগণও অংশ নিচ্ছে। এসব দেখে সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তারা আবার তাদের পুরনো চেহারায় ফিরে যায়। তবে যত বাধাই আসুক রাজপথ ছেড়ে যাব না।
নিরপেক্ষ সরকার না হলে ভোট করে কোনো লাভ হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তো সংবিধানে আগে ছিল না। প্রয়োজনে অনেক কিছু সংবিধানে নিয়ে আসতে হয়। সেটাই আনতে হবে। এমন একটি আন্দোলন তৈরি করা হবে যাতে তারা বাধ্য হবেন এমন একটি ব্যবস্থা করে নির্বাচনে যেতে। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নতুন করে দিতে হবে কেন। তত্ত্বাবধায়কের বিধানটা তো আমাদের সংবিধানেই ছিল। বিচারপতিকে দেওয়া যাবে না বলে আদালতের একটা রায় আছে। সেটা পরিবর্তন করার ব্যবস্থা করতে হবে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে নিয়ে আসতে হবে। এটা সম্ভব। নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে এটাই আমাদের মূল দাবি। জনগণের আন্দোলনের মুখে এটা মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। আর সংবিধান তো কোনো বাইবেল নয় যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না।
যুগান্তর : সরকার সংলাপের উদ্যোগ নিলে তাতে সাড়া দেবেন কিনা?
মির্জা ফখরুল : বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে সরকারের সঙ্গে সংলাপের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আলোচনার কথা বলছি না। আমরা বলছি সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া কোনো আলোচনা বা সংলাপে যাব না।
যুগান্তর : সরকারবিরোধী আন্দোলনে বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে অনেক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। বৃহত্তর ঐক্য গড়ে ওঠার ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
মির্জা ফখরুল : বর্তমান এ ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই। আমরা সেই উদ্যোগ নিয়েছি, এমনকি অনেক এগিয়েছি। বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে আমরা আশাবাদী। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছি। প্রত্যেক দলেই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
এখন কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে কাজ করছি। কোন দাবির ওপর আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করব সেটা চ‚ড়ান্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া আমরা তো আন্দোলনের মধ্যেই আছি। অন্য দলও রাস্তায় নেমেছে। এসব কিছু নিয়েই আমরা সামনের দিকে এগোবে। সরকারবিরোধী দলই নয়, সরকারের মিত্র কেউ যদি আমাদের দাবির সঙ্গে একাÍ ঘোষণা করে তাদের নিয়েও কাজ করতে আমাদের আপত্তি নেই।
যুগান্তর : যুগপৎ আন্দোলন হলে ২০ দলীয় জোট বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভবিষ্যৎ কী। এটা বিলুপ্ত করবেন নাকি নিষ্ক্রিয় রাখবেন?
মির্জা ফখরুল : আমরা সরকারবিরোধী আন্দোলনটা যুগপৎভাবে শুরু করছি। আমরা আগে যে জোট করেছি সেটা অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বা অ্যাগ্রিমেন্ট ছিল না। আমাদের যে ঘোষণাপত্র ছিল সেখানে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠানেরা জন্য এ জোট। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যেটা ২০ দলীয় জোট হয়েছিল। একইভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও হয়েছিল আন্দোলন ও নির্বাচনের লক্ষ্যে।
সেগুলো তো পার হয়ে গেছে। এখন নতুন একটা প্রেক্ষিত। এ প্রেক্ষিতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করব। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সিদ্ধান্ত হবে এরপর আমরা কী করব। এখানে জোট বিলুপ্তের প্রশ্ন আসে না। কারণ আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে সব দল একমত। ২০ দলে যারা ছিলেন এবং যাদের সঙ্গে নতুন করে কথা বলছি সবাই এ ব্যাপারে একমত। জামায়াতের আমিরের বক্তব্যের ব্যাপারে আমি কিছু বলব না। তবে জামায়াতও যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলেছে।
যুগান্তর : চেয়ারপারসন অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে আপনারা ক্ষমতায় গেলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী?
মির্জা ফখরুল : এটা নিয়ে আলোচনার কী আছে। বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী হবেন খালেদা জিয়া। তার অবর্তমানে প্রধানমন্ত্রী হবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
যুগান্তর : বিগত নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ভোটে যাওয়া নিয়ে দল এবং দলের বাইরে নানা সমালোচনা রয়েছে। আগামী দিনে রাজপথের আন্দোলন ও নির্বাচনেও কি নেতৃত্ব ভাড়া করা হবে নাকি সবকিছু বিএনপির নেতৃত্বেই চলবে?
মির্জা ফখরুল : বর্তমানে আমাদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। রাজপথের আন্দোলনে বরাবর বিএনপিই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। মনে রাখতে হবে ২০১৮ আর ২০২২ এক নয়।
যুগান্তর : আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ হচ্ছে। আপনাদের দলের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপির একটি অংশকে নিয়ে ভোটে যেতে পারেন?
মির্জা ফখরুল : এসব অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন। বিএনপির মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই।
যুগান্তর : দেশে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় সুশীল সমাজসহ কিছু দল এমনকি প্রভাবশালী কয়েকটি দেশ তৎপরতা চালাচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল : আমরা নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছি। জাতীয় সরকারের জন্য নয়। তাছাড়া এ নিয়ে আমাদের দলের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। আগে নির্বাচন হবে। এরপর জাতীয় সরকার। নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকারের গুঞ্জন আছে কিনা জানি না তবে আমার কাছে মনে হয় এটার বাস্তবতাটা একটু ভিন্ন।
যুগান্তর : বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটসহ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরকার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করছে। আপনি কি তাই মনে করেন। এ সংকট থেকে উত্তরণে কী করা প্রয়োজন?
মির্জা ফখরুল : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে পুঁজি করে সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশের মানুষ জানে বর্তমান সংকটের পেছনে একমাত্র কারণ সবক্ষেত্রে লুটপাট। বিপিসি লাভে থাকার পরও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। কারণ বিপিসির টাকা সরকার নিয়ে লুটপাট করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির কারণেই সবকিছুর দাম আজ সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। এ সংকট উত্তরণে একমাত্র পথ হচ্ছে সরকারের পতন। কারণ এরা থাকলে চুরি হবে, লুট হবে। এ সরকার কখনো দেশের অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা আনতে পারবে না। এখন সরকারের কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যার মতো করে লুটপাট করছে। কেউ সরকারের কথা শোনে না। তাই এ সরকারের বিদায়েই জনগণ স্বস্তি পাবে।
যুগান্তর : বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে-এমন পরিস্থিতিতে দল চালাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা?
মির্জা ফখরুল : এতে কিছুটা সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে কোনো সিদ্ধান্ত দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে আলোচান করে চ‚ড়ান্ত করেন। প্রতি সপ্তাহেই আমাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হচ্ছে। দলীয় কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
যুগান্তর : দলের পদ ও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে দলের ভেতর কোন্দল রয়েছে বলে নানা অভিযোগ-এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
মির্জা ফখরুল : কোন্দল বলতে যা বোঝায় তা আমাদের দলে নেই। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে নানা মত থাকতে পারে। আর গণতান্ত্রিক দলে এটাই থাকা উচিত। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া পদ পাওয়ার জন্য নেতাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিএনপির সব ক্ষেত্রেই একাধিক যোগ্য নেতা রয়েছে কিন্তু সে তুলনায় পদের সংখ্যা সীমিত। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেটাকে কোন্দল বলা যাবে না। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। এক মাসের নোটিশে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারি।
যুগান্তর : সময় দেওয়ার জন্য যুগান্তরের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল : আপনাকে এবং যুগান্তরের সব পাঠককে ধন্যবাদ।