যুবদলে যে নাটকীয়তা
২০১৯ সালের ১লা নভেম্বর। দীর্ঘ দেড়যুগের খরা কাটিয়ে সেদিন জেলা ও মহানগরের দুটি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। হঠাৎ দুই কমিটি ঘোষণায় সিলেট যুবদলের নেতারা হতবাক হয়ে যান। কেবলমাত্র মহানগর আহ্বায়ক নজিবুর রহমান নজিব ছাড়া বাকি সবাই নবাগত।
নতুন মুখ। যারা যুবদল হয়ে মাঠে ছিলেন তাদের নামগন্ধ নেই ঘোষিত দুটি আহ্বায়ক কমিটিতে। অথচ কমিটি গঠনের দিকে চেয়ে চেয়ে অনেকেই যুবদলেই কাটিয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক জীবন। এ নিয়ে সিলেটে শুরু হয় তীব্র অসন্তোষ। নানা ঘটনা ঘটে সিলেট যুবদলে। বিদ্রোহের দাবানল যখন তুঙ্গে তখন বিএনপি’র সিনিয়র নেতারা বসে এর সুরাহা করেন।
ক্ষোভ-বিক্ষোভ কমিয়ে আনেন। এরপরও আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের কার্যক্রম চলছিল। এরই মধ্যে তিন বছর হতে চললো সিলেট যুবদলের দুটি ইউনিটের বয়স।
জেলার ১৮ ও মহানগরের ২৭ ইউনিট চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। গোছগাছ করা হচ্ছিলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের। এরই মধ্যে এলো নতুন খবর। আহ্বায়ক কমিটি সদস্যদের ভোটার করে জেলা ও মহানগর যুবদলের সম্মেলন ও কাউন্সিল করা হবে।
প্রায় সপ্তাহখানেক আগে এই ঘোষণায় ফের চাঙ্গা সিলেটের যুবদল। ইতিমধ্যে জেলা যুবদলের সম্মেলন ও কাউন্সিল ১০ই সেপ্টেম্বর ও মহানগর যুবদলের সম্মেলন ১১ই সেপ্টেম্বর করার তারিখ ঘোষণা করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।
সিনিয়র আইনজীবী ও বিএনপি নেতা এডভোকেট আশিক উদ্দিনকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। সিলেট জেলা বিএনপি’র মতো যুবদলের নেতৃত্বকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
কিন্তু সম্মেলন ও কাউন্সিলকে সামনে রেখে নানা ঘটনার ঘনঘটা সিলেট যুবদলে। যেটি দেখে হতাশ প্রার্থী ও ভোটাররা। কেন্দ্রও এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বলে জানিয়েছেন সিলেটের নেতারা। এ কারণে কেন্দ্রের নির্দেশে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ‘আপাতত’ স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামীকাল সিলেট আসতে পারেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল। তারা সামগ্রিক পর্যালোচনা করে নতুন করে সিদ্ধান্ত দেবেন।
এই অবস্থায় সম্মেলন ও কাউন্সিল নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন প্রার্থী ও ভোটাররা। সিলেট যুবদলের নির্বাচনের নীতিমালা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যে নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছিল সেটি পরিবর্তন, সংযোজন হয়ে কেন্দ্র থেকে আসছে। হঠাৎ করে দুটি ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ভোটগ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থীর হয়ে দুটি ইউনিটের কমপক্ষে ১০ নেতা মাঠে সক্রিয় ছিলেন। মনোনয়নের টাকা নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে শুধু বিএনপি’র ঘরানায় নয়, গোটা সিলেটের রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হচ্ছে। ঘোষিত তফসিলে সভাপতি পদে ৫০ হাজার টাকা, সাধারণ সম্পাদক পদে ৪০ হাজার টাকা ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৩০ হাজার টাকা মনোনয়নের ফি নির্ধারণ করা হয়।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলে। এ ছাড়া প্রার্থীকে স্ব-স্ব শাখার কাউন্সিলর ও যুবদলের সঙ্গে ন্যূনতম ৩ বছর সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়। ঘোষিত নীতিমালা নিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা পড়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। মনোনয়ন বিক্রির সময় দেখা গেছে; জেলার অনেক সদস্য মহানগর এবং মহানগরের কেউ কেউ জেলা থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।
ফলে তাদের মনোনয়নপত্রের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে- নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো যাচাই, বাছাই হয়নি। ঢাকা থেকে নতুন করে নীতিমালা আসার পর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। কয়েক মাস আগে জেলা বিএনপি’র সম্মেলনে দেখা গেছে; জেলার কাউন্সিলররা জেলায় প্রার্থী হতে পারছেন।
মহানগর কিংবা অন্য কোনো ইউনিটের কেউ প্রার্থী হতে পারেননি। যুবদলের বেলায় সেটি ব্যতিক্রম করা হচ্ছে। দুটি ইউনিটে প্রার্থী হওয়া নেতারা জানিয়েছেন- নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং নেতাদের নানা কর্মকাণ্ড গোটা সম্মেলন ও কাউন্সিলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। কখন কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। আর যারা এসব করছেন তারা সিলেট যুবদলের দুটি ঘুমন্ত কমিটি গঠনের লক্ষ্যেই এসব করছেন।
তারা জানিয়েছেন- প্রথম কথা হচ্ছে; অধিভুক্ত ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে ভোট নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি তো পূর্ণাঙ্গ কমিটি না। আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। এই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করলে ভবিষ্যতে সিলেট যুবদলের দুটি ইউনিট কতোটুকু শক্তিশালী হচ্ছে- সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দলের স্বার্থে সবাই এ সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও পরবর্তীতে নির্বাচন নিয়ে যে নাটকীয়তা হচ্ছে এতে অনেক যোগ্য নেতা নোংরা রাজনীতিতে পড়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। তাদের মতে- সিলেটে ছাত্রদলের মতো যুবদলকে মৃত সংগঠন হিসেবে পরিচালিত করতে নির্বাচনকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।
আর জেলা ও মহানগরের আহ্বায়করা এর দায় এড়াতে পারেন না। তারা তাদের পকেট কমিটি দিয়ে যুবদল পরিচালিত করতে যা যা করা দরকার সবই করছেন বলে দাবি করেন নেতারা। এদিকে- সিলেট যুবদল নিয়ে প্যানেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির জেলা ও মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। যুবদলের নেতারা জানিয়েছেন- ইতিমধ্যে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির জেলা ও মহানগর যুবদলের তিনটি পদে তার প্রার্থীদের চূড়ান্ত করেছেন।
ওদিকে মুক্তাদির যখন প্যানেল ঘোষণা করেছেন তখন স্বাভাবিকভাবে সিলেটের মেয়র, সিনিয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর আশীর্বাদ নিয়ে আরেকটি প্যানেলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তবে- ভেতরে ভেতরে আরিফুল হক চৌধুরী সক্রিয় থাকলেও এখনো তিনি প্রকাশ্য আসেননি। মেয়র বলয়ের নেতারা জানান, সিলেট যুবদলে সবাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চেয়েছিল। এ কারণে মেয়র বলয়ের নেতারা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছেন।
একটি প্যানেল ঘোষণা হওয়ার কারণে প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই অসহায় এবং অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছেন। দলের স্বার্থে আরিফুল হক চৌধুরী বলয়ের নেতারা বিকল্প প্যানেল দেয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি পদে প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে আসতে পারে চমকও। সিলেট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সামনে আন্দোলন সহ অনেক দলীয় কর্মকাণ্ড রয়েছে।
এ কারণে দ্রুত তারা যুবদল গোছাতে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। আর খন্দকার মুক্তাদিরের পক্ষে যে প্যানেলের কথা বলা হচ্ছে; সেটি মূলত প্যানেল নয়; আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করতে প্রার্থীদেরও ডাকা হয়েছিল। সবার সঙ্গে কথা হচ্ছে। এখানে কাউকে ভেতরে ও কাউকে বাইরে রেখে নয়। তিনি জানান, যা করা হচ্ছে দিনশেষে সিলেট যুবদলকে জয়ী করার জন্য করা হচ্ছে। কাউকে খুশি কিংবা অখুশি করার জন্য নয়। সিলেট যুবদল শক্তিশালী সংগঠন হলে আন্দোলন সংগ্রামে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।