‘নেতৃত্বশূন্য’ বিএনপির পাওয়া না পাওয়ার হিসাব
৪৪ বছরের পথ পাড়ি দিয়ে ৪৫ বছরে পা দিয়েছে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’। ৪৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে সেভাবে সফলতার স্বাক্ষর না থাকলেও সংগঠন হিসেবে দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠেছে।
তবে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসনে থাকায় এখন নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে বিএনপি। গত সাড়ে চার দশকে বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এবং বিরোধীদলে থাকা বিএনপিকে সংসদের বাইরেও থাকতে হয়েছে। এছাড়া জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বিএনপিতে জিয়া পরিবারের নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আবার যে আদর্শ নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠা, সেই আদর্শিক জায়গায় বিএনপি নেই-খোদ দলের ভেতরেই এমন কথা প্রচলিত রয়েছে। বিএনপির আকর্ষণ হিসেবে দলটির নেতাকর্মীরা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অবদান, তার আদর্শ, দেশপ্রেম ও সততার বিষয়ই বারবার সামনে আনেন।
জিয়াউর রহমানের আদর্শ কি এখনো বিএনপিতে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান জাগো নিউজকে বলেন, মুখে বলা হয় আছে, কিন্তু কর্মে তার কতটুকু প্রতিফলন আছে? যদি থাকতো তাহলে জিয়াউর রহমানের আশপাশে সৎ, দেশপ্রেমিক লোকজন থাকতেন, তেলবাজরা থাকতে পারতেন না। যারা স্টাডি (পড়াশোনা) না করতেন, তারা সংগঠনের ভালো পদে থাকতে পারতেন না। এখন কি সেটা আছে?
তার মতে, আদর্শ বিচ্যুত না হলে বিএনপি আরও শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হতো।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতার মোহে আদর্শচ্যুত হয়। কারণ বিএনপি উদার গণতান্ত্রিক মধ্যপন্থী একটি রাজনৈতিক দল। সেখানে ক্ষমতার জন্য জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সঙ্গে জোট করে সাংগঠনিকভাবে ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে। এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বিএনপি জামায়াত ছাড়া আন্দোলন করতে পারে না। আর বিদেশিদের কাছে মৌলবাদী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিএনপির পরিচিতি ছড়িয়েছে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক কর্মীদের চেয়ে অরাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীদের মূল্যায়ন করেছে। ফলে রাজনীতি এবং সংসদে রাজনীতিবিদরা দুর্বল হয়ে পড়েছেন, শক্তিশালী হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। টাকা বড় করে দেখলে সুবিধাবাদীদের উত্থান ঘটে। অর্থনীতিতে যারা শক্তিশালী তাদের ওপর নির্ভরশীল হলে রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না, নৈতিক স্খলন হয়।