আওয়ামী লীগের পরবর্তী চমক তাপস?

শেখ ফজলে নূর তাপস। শহীদ শেখ ফজলুল হক মনির কনিষ্ঠ সন্তান। কিন্তু শেখ ফজলুল হক মনির পরিচয় ছাপিয়ে তিনি নিজের পরিচয় এখন পরিচিত হচ্ছেন। অথচ ২০০৭ সালের আগে আওয়ামী লীগের খুব কম নেতাই তার সম্বন্ধে জানতেন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি খুব একটা পরিচিতও ছিলেন না। কিন্তু ২০০৭ সালের এক-এগারোর সরকার আসার পর শীর্ষ রাজনীতিবিদদের চেহারা পাল্টে যায়, পাল্টে যায় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের চরিত্রের আইনজীবীদের আচার-আচরণও।

এই সময়ে শেখ হাসিনার মামলা যারা লড়তেন সেই সমস্ত আইনজীবীরা ফাইল ফিরিয়ে দেন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে তরুণ একজন আইনজীবী সামনে এসে দাঁড়ান। তার নাম শেখ ফজলে নূর তাপস।

সেই সময় তিনি পাদপ্রদীপে আসেন। মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতির সেই সময়ে মামলাগুলো তত্ত্বাবধান করতে যে রাজনীতিতে আলোচিত এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তাপস। তারপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি।

২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ধানমন্ডির আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। ওই আসন তিনবার জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং সাঈদ খোকনকে টপকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হয়ে তাপস পরিছন্নতা এবং সততার এক নতুন নজির স্থাপন করেছেন।

এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনে কোনো অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আসেনি। নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। কতটুকু সফল হয়েছেন, কতটুকু ব্যর্থ হয়েছেন সেটি অন্য বিবেচনা। কিন্তু একজন নগর পিতা হিসাবে তিনি শতভাগ সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সিটি কর্পোরেশনে দুর্নীতি, দালালদের দৌরাত্ম্য কমে গেছে। এ কারণেই তাপস রাজনীতিতে একটি আলাদা ভাবমূর্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

এখন অবশ্য শেখ ফজলে নূর তাপস লাইমলাইট এসেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবসে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিলো। সেরকম একটি অনুষ্ঠানে শেখ ফজলে নূর তাপসের বক্তৃতা সবাইকে মুগ্ধ করেছে। এ ধরনের আবেগঘন এবং যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া খুব কম আওয়ামী লীগ নেতাই দিতে পেরেছেন বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন।

এই অনুষ্ঠানে আরেকটি আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিলো। তাপস এবং তার বড় ভাই পরশকে কাছে ডেকে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাতৃস্নেহে তাদেরকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এবং এর পরপরই তাদের দুজনকে পাশে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা কোনো বার্তা দিলেন কিনা সেটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম আলাপ-আলোচনা গুঞ্জন চলছে।

অনেকেই মনে করছেন যে, এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি আবেগ প্রকাশ। আগস্টে শুধু জাতির পিতা সপরিবারে মারা যাননি, শেখ ফজলে নূর তাপস এবং শেখ ফজলে শামস পরশও সর্বোচ্চ হারিয়েছেন। তাদের মা বাবাকে হারিয়েছেন এবং একটি কঠিন অবস্থা থেকে তারা আজকের জায়গায় এসেছেন। সে কারণেই শেখ হাসিনা তাদের সাথে একাত্ম হয়েছিলেন। তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি সুস্পষ্ট বার্তাবাহক।

শেখ তাপস তিনবারের এমপি, নগর পিতা হলেও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নন। আগামী ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই কাউন্সিলে তাপস কি চমক হিসেবে আসছেন? আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কি তাপসের আগমনের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে? আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে তাপসের আবেগঘন দৃশ্যের পর এই বিষয়টি আবার নতুন করে সামনে এসেছে। দেখা যাক তাপস আগামী কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের নতুন চমক হয় কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *