আওয়ামী লীগের কারা অর্থের বিনিময়ে ষড়যন্ত্র করছে?
আওয়ামী লীগের প্রবীণ সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ জাতীয় সংসদে গতকাল বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তার কথা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তিনি একজন প্রবীণ সংসদ সদস্য।
কয়েকবার জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন জামালপুর-১ থেকে। ২০০৯ সালে মন্ত্রী ছিলেন। কাজেই তার কোনো কথাই ফেলে দেওয়ার মত নয়। জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় বসে তিনি মেঠো রাজনৈতিক বক্তব্য দিবেন এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। আবুল কালাম আজাদ গতকাল জাতীয় সংসদে যা বলেছেন তা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘরোয়া আড্ডাতেও আলোচিত হয়।
কিন্তু সংসদের পবিত্র প্রাঙ্গণে আবুল কালাম আজাদ যখন এই বক্তব্য গুলো বলেছেন তখন তা গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। আবুল কালাম আজাদ বলেছেন যে, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র করছে, অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের অনেক লোকই এ ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলায় যারা কাজকর্ম করছে তাদের দিকে নজর রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে গতকাল জাতীয় সংসদে ১৪৭ বিধির সাধারণ আলোচনায় তিনি এই সমস্ত মন্তব্য করেছেন।
আবুল কালাম আজাদ এটিও বলেছেন যে, পঁচাত্তরের খুনি চক্রান্তকারীদের প্রেতাত্মারা এখনো ক্ষান্ত হয়নি, আজও তারা ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, কি ষড়যন্ত্র হচ্ছে অনেক কিছুই জানি, সব কথা তো বলতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যদি একান্তে কথা বলতে পারতাম তাহলে অনেক কথা বলতে পারতাম। তিনি বলেন, এখনো যে ষড়যন্ত্র চলছে এ ষড়যন্ত্রের ভিতর আমাদের নিজেদের অনেক লোকও অর্থের বিনিময়ে সম্পৃক্ত আছেন।
আবুল কালাম আজাদের এই বক্তব্যের পর সরকারের প্রতিক্রিয়া কি হয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া কি হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে একজন সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে যখন এ ধরনের অভিযোগ করেন, সেই অভিযোগগুলো বিচার বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এখানে কয়েকটি বিষয় আছে যে বিষয়গুলো বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
প্রথমত, আবুল কালাম আজাদ বলেছেন যে, অনেক তথ্য তিনি জানেন কিন্তু বলতে পারেন না। তিনি যদি ষড়যন্ত্রের কথা বলতে পারেন তাহলে কারা ষড়যন্ত্র করছে সেই নাম উচ্চারণ করলেন না কেন? কেন শুধু শুধু প্রধানমন্ত্রীকেই বলতে হবে? প্রধানমন্ত্রী তো এরকম ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ্যেই উচ্চারণ করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের নির্বাচনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ কিভাবে বিএনপিকে সাহায্য করেছিল সে তথ্য প্রকাশ করেছেন।
তাহলে আবুল কালাম আজাদের ভয় কি? এজন্য তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করতে হবে কেন? জাতীয় সংসদের তিনি যদি ষড়যন্ত্রের কথা বলেন এবং আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা অর্থের বিনিময় এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে তার কথাও বলেন তাহলে কারা ষড়যন্ত্র করছে, কত অর্থ নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেটি উহ্য রাখলেন কেন?
আবুল কালাম আজাদের তত্ত্বের একটি ভয়াবহ দিকও আছে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ষড়যন্ত্রের যুক্ত। তিনি যদি সুনির্দিষ্ট করে নেতাদের নাম উচ্চারণ না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের মধ্যে পারস্পারিক সন্দেহ-অবিশ্বাস আরও বাড়বে।
একটি রাজনৈতিক দলের জন্য যেটি খুবই ভয়াবহ প্রবণতা। কারণ, যখন একে অন্যকে সন্দেহ করবে, অবিশ্বাস করবে, ষড়যন্ত্রের জন্য অর্থ গ্রহণকারী মনে করবে, তখন আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেবে। ঢালাওভাবে মন্তব্য করাটা একজন প্রবীণ সংসদ সদস্যের জন্য কতটা সমীচীন হলো সেই প্রশ্নটা রয়ে যায়। কারণ, আমরা জানি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সময় যারা ষড়যন্ত্র করেছে তারা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ এবং নেতৃত্ব পর্যায়ে ষড়যন্ত্র হয় বেশি।
তৃণমূল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি, নেতৃত্বের সঙ্গে কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। কাজেই প্রবীণ এই সংসদ সদস্যকে ঝেড়ে-কেশে বলতে হবে তিনি কি সত্যি সত্যি জেনে বুঝে করেছেন? নাকি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রত্যাশায় আতঙ্ক ছড়িয়েছেন? নিশ্চয়ই তিনি জেনে বুঝে বলেছেন। আর জেনেবুঝে বললে কারা ষড়যন্ত্রকারী, কিভাবে ষড়যন্ত্র করছে, তার কাছে কি তথ্য প্রমাণ আছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। এটা তার পবিত্র দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আবুল কালাম আজাদ কি সেই কাজটি করবেন?