‘অশালীন’ বক্তব্য দেওয়ায় আ’লীগ এমপি মোস্তাফিজ লাঞ্ছিত
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বাঁশখালীর স্থানীয় সংসদ-সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী অপদস্ত ও লাঞ্ছিত হয়েছেন। টাকা নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ এনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সভায় অভিযোগ তুলে তাদের গালাগাল করার পর এমপির দিকে বোতল, জুতা কেক ছুড়ে মেরেছেন বিক্ষুব্ধ কিছু নেতাকর্মী।
এমপি মোস্তাফিজ নিজেও তেড়ে যান। শনিবার সকালে নগরীর ষোলশহর ২ নম্বর গেটে এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বিকালে একই স্থানে সাবেক এমএনএ আবু সালেহের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
এদিকে শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৫ থানার আহ্বায়কদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। সেখানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ নগর আওয়ামী লীগের পদস্থ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা তুলে ধরেন তৃণমূলের চিত্র।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা শাখার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি। সভা সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। সভায় চট্টগ্রাম দক্ষিণের দুই উপজেলা-পটিয়া ও সাতকানিয়া ব্যতীত সব উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ৩০ অক্টোবর আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ধিত সভা শুরু হয় সকাল ১০টার দিকে। দুপুরে সভার শেষ পর্যায়ে এসে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে কথা ওঠে। বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি বক্তব্য দেওয়ার সময় সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুরসহ জেলার কয়েকজন নেতার নাম ধরে অশ্লীল ভাষায় বক্তব্য দেন।
তাদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার অভিযোগ তুলেন। তুই তোকারি করে অশ্লীল ভাষায় করেন গালাগালও। প্রকাশ্য সভায় এমন অশালীন বক্তব্য দেওয়ায় পুরো হাউজ তার বিরুদ্ধে চলে যায়। অধিকাংশ নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। সবাই সমস্বরে চিৎকার করে এমপি মোস্তাফিজুরের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে তার দিকে বোতল, কেক ও জুতা ছুড়ে মারলে পুরো হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এমপি মোস্তাফিজ নিজেও কোনো কোনো নেতাকর্মীর দিকে তেড়ে যান। এ অবস্থায় অনুষ্ঠানের অতিথি হুইপ আবু সাঈদ মাহমুদ স্বপন হস্তক্ষেপ করে নেতাকর্মীদের শান্ত করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এমপি মোস্তাফিজ সভাস্থল থেকে দ্রুত বের হয়ে যান।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বর্ধিত সভায় ‘সামান্য’ গোলযোগ হওয়ার কথা স্বীকার করে শনিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, সভায় দক্ষিণের বিভিন্ন থানার সম্মেলনের তারিখ ধার্য করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনেরও তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে ৩০ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজন করা হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে অবৈধ পথে সরকার উৎখাতের জন্য অরাজকতা ও নাশকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এর আগেও তারা বিভিন্ন অযৌক্তিক ইস্যুতে জ্বালাও-পোড়াও-সন্ত্রাস ও সাধারণ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। অতীতে আওয়ামী লীগ রাজপথে থেকে তাদের প্রতিহত করেছে। এবারও করবে। এজন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগকে তৃণমূল স্তরে সাংগঠনিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে।