এবার পণ্যের দাম বাড়াতে ‘হিজাব বিতর্ক’ তুললেন কারখানার শ্রমিকরা

আশুলিয়ায় কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর দাবিতে এবার হিজাব নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন হস্তশিল্প শ্রমিকরা। শনিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে আশুলিয়ার গাজিরচট এলাকার ‘ইয়াংজিন ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড’ কারখানার অর্ধশতাধিক শ্রমিক এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি মালিকপক্ষের। ওই কারখানায় চুল দিয়ে বিভিন্ন পণ্য এবং পরচুলা তৈরি করেন শ্রমিকরা।

শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের লোকজন জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন ইয়াংজিন ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির একটি লাইনের অর্ধশতাধিক শ্রমিক। ১১ এপ্রিল একই দাবিতে শ্রমিকরা কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে কাজে যোগ দেননি।

শনিবার সকালে কারখানার সামনে এসে আবারও উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি জানান। এ সময় হিজাব পরে আসায় কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ নিয়ে মালিকপক্ষের লোকজনের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস আগে কারখানা পরিদর্শনে আসেন বিদেশি মালিক। এ সময় হিজাব পরা শ্রমিকদের হিজাবের সামনের অংশ মেশিনের সামনে ঝুলে ছিল। বিষয়টি দেখে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করেন মালিক। তখন শ্রমিকদের হিজাবের সামনের অংশের পরিবর্তে মাস্ক পরে কাজ করলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম বলে জানান তিনি। কারখানার শ্রমিকরা হিজাব পরে কাজ করার কথা জানালে মালিক মেনে নেন। সেদিনই এই আলোচনা শেষ হয়ে যায়। হঠাৎ এক মাস পর শনিবার হিজাবের বিষয়টি সামনে এনে বিতর্কের সৃষ্টি করেন শ্রমিকরা।

কারখানার সুপারভাইজার ফেরদৌস বলেন, ‘উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের দাম কিছুটা কম দিচ্ছিলেন মালিকপক্ষ। দাম বাড়ানোর জন্য শ্রমিকরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ হিজাব নিয়ে বিতর্ক তুলে বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে চেয়েছিলেন শ্রমিকরা। পরে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে।’

কারখানার শ্রমিক পারুল আক্তার বলেন, ‘গত মাসে আমাদের অনেক কম বেতন দিয়েছেন মালিকপক্ষ। আমরা কয়েক মাস ধরে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছি। এরই মধ্যে হিজাবের পরিবর্তে মাস্ক পরে কারখানায় আসার নির্দেশ দেন মালিকপক্ষের লোকজন। এজন্য আজ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি আমরা।’

কারখানার অ্যাডমিন ইমরান হাসেম বলেন, ‘আমাদের কারখানার মালিক বিদেশি। এক মাস আগে কারখানা পরিদর্শনে এসে কাজ করতে সমস্যা হওয়ায় হিজাবের সামনের অংশের পরিবর্তে মাস্ক পরার কথা বলেছেন তিনি। আমরা মালিককে বলেছি, অধিকাংশ শ্রমিক হিজাব পরতে আগ্রহী। এ নিয়ে আপত্তি আছে। তখন মালিক দাবি মেনে নেন। বিষয়টি তখনই সমাধান হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ এক মাস পর শ্রমিকরা হিজাবের বিষয় সামনে এনে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। মূলত উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি সফল করার জন্য হিজাব বিতর্ক সামনে এনেছেন তারা। আমাদের কারখানায় ১২০০ শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে একটি লাইনের অর্ধশতাধিক শ্রমিক এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। এতে আমাদের সুনাম নষ্ট হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশক শিল্প শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিল শ্রমিকরা। হিজাব পরায় কারখানায় ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। এখন হিজাব আলোচিত ইস্যু, এজন্য দাবি আদায়ের জন্য হিজাবের বিষয়টি সামনে এনে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন শ্রমিকরা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *