‘নির্বাচন কমিশন সাজানো নির্বাচনের পায়তারা চালাচ্ছে’

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন যেন সাজানো নির্বাচন করতে পায়তারা চালাচ্ছে। প্রায় সব রাজনৈতিক বিরোধীতা সত্ত্বেও কমিশন ইভিএম-এ ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বুধবার জাপার বনানীর কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, ইভিএম হচ্ছে কারচুপির মেশিন। আবার নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বলছে, সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব নয়। তাই নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে তাতে অনেকেরই সন্দেহ আছে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে মাতামাতি করছে।

অপরদিকে, দেশের মানুষ কথা বলতে পারছে না। কোন দাবিতে আন্দোলন হলে পুলিশ ও প্রতিপক্ষরা তাতে হামলা চালাচ্ছে। তাতে মনে হচ্ছে, এমন বাস্তবতায় নির্বাচন হলে লেভেল প্লেইং ফিল্ড হবে না। যেখানে সরকারের ৯০ ভাগ প্রভাব রয়েছে, পুলিশ ও প্রশাসন সকারের হাতে, এমন বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে কোন সংকট নেই। কোন ভাঙনের মুখে পড়বে না জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রতিপক্ষ হিসেবে জাতীয় পার্টিকে বারবার ক্ষতি করতে চেয়েছে। যারা পার্টি ছেড়ে গেছে তারা কেউ শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। এভাবে কেউ চলে গেলেও জাতীয় পার্টি দূর্বল হবে না।

তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদ আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। আমার অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার সংবাদে তিনি বারবার ফোন করে খোঁজ খবর নিয়েছেন। তিনি বারবার বলেছেন, আমি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে চাই না। তিনি বারবার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন ভালোভাবে চলছে।

জিএম কাদের বলেন, প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আমাদের তিনি পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা বা না করা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের এখতিয়ার। জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের মনে হয়েছে, তিনি কারো কথায় বা চাপে কাউন্সিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে।

অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাইরের কিছু মানুষ হয়তো, বেগম রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে ভিন্ন এজেন্টা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। যারা জাতীয় পার্টির কেউ না, কেউ হয়তো ছিলো অনেক আগে জাতীয় পার্টিতে আবার সুর্নিদিষ্ট অভিযোগে কাউকে কাউকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা বেগম রওশন এরশাদকে অপব্যবহার করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আবার অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ প্রায় এক বছর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিনি অবদান রাখতে পারছেন না।

তাই পার্টির সংসদীয় দল জাতীয় পার্টির ঐক্য রক্ষা ও পার্টিকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচাতে বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গেলো এক বছরে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল অসুস্থ বিরোধীদলীয় নেতার কর্মকাণ্ড নিয়ে ভাবেনি। এখন জাতীয় পার্টির স্বার্থেই বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল তাদের সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে জানিয়েছেন। এখন বিধি অনুযায়ী স্পিকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তখনকার বাস্তবতা ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে জোট গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় পার্টি। তবে, এখন আমরা তিনশো আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। দলকে আরো শক্তিশালী করতে নিয়মিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।

তিনি বলেন, মেগা প্রকল্প চালু হচ্ছে একটিও সময়মত শেষ হচ্ছে না সময় বাড়াতে হচ্ছে, আবার ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। একই সাথে যখন দেখা যায় শুধু সুইস ব্যাংকেই ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে তখন দুর্নীতির বিষয়ে আর কোন প্রশ্নের অবকাশ থাকে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *