রওশনকে সরাতে না পেরে জি এম কাদের ‘হতাশ’
বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে স্পিকারের দফতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিন কার্যদিবসে ওই চিঠির বিষয়ে স্পিকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। তিন কার্যদিবস শেষ হয়েছে। রেওয়াজ অনুযায়ী বৈঠক ডাকাসহ বৈঠকের রেজুলেশনের স্বাক্ষরে ত্রুটি থাকার কারণে স্পিকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি।
ফলে স্পিকারের দফতর থেকে জি এম কাদেরকে স্পিকারের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারেনি।
এদিকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিনও দেশে নেই। তিনি উইমেন স্পিকার্স অব পার্লামেন্ট সামিটে যোগ দিতে উসবেকিস্তানে তাসখন্দে গেছেন। ফলে স্পিকারের সঙ্গেও জি এম কাদের যোগাযোগ করতে পারছেন না। এতে আরও হতাশায় ভুগছেন জি এম কাদের।
বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে স্পিকারের কাছে দেওয়া চিঠি নিয়ম অনুযায়ী ডাকা হয়নি। বৈঠক ডাকা থেকে শুরু করে রেজুলশেনে স্বাক্ষর পর্যন্ত রয়েছে তিন গুরুত্বপূর্ণ ভুল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদীয় দলের বৈঠক আহ্বানে চিঠি দিয়ে থাকেন সংসদীয় দলের চিফ হুইপ। চিপ হুইপ নিজেই উপনেতা জি এম কাদেরের নির্দেশে দলীয় এমপিদের চিঠি দিয়েছেন। কী বিষয় বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে সে বিষয়টি চিঠিতে উল্লেখ থাকতে হবে।
চিপ হুইপের দেওয়া চিঠিতে লেখা ছিল গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এমপিদের দেওয়া চিঠিতে বৈঠকের এজেন্ডার বিষয়টি উল্লেখ করার নিয়মে রয়েছে। বিরোধীদলের নেতা থেকে রওশনকে বাদ দেওয়ার কথা এজেন্ডায় লেখা হয়নি।
জি এম কাদের কৌশলে বিরোধীদলের নেতাকে বাদ দেওয়ার কথাটি এমপিদের চিঠিতে লিখতে দেননি। কারণ এ কথাটি লেখা থাকলে কোনো কোনো সংসদ সদস্য হয়ত বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন না।
বৈঠকে রেজুলেশন লেখা দায়িত্ব চিপ হুইপের। কিন্তু চিপ হুইপ রেজুলেশন লেখেননি। লিখেছেন দলটির মাহসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। এ ছাড়া সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয় ৩১ আগস্ট।
৩১ আগস্ট বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১ সেপ্টেমর। এমনকি ৩১ তারিখ বৈঠক না হলেও তা মুলতবিও করা হয়নি।
রেজুলেশনে স্বাক্ষর করার কথা উপনেতা জিএম কাদেরের। কারণ তিনি সংসদীয় দলের বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন। অথচ তিনি রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেননি। স্বাক্ষর করিয়েছেন চিফ হুইপকে দিয়ে।
এ সব অনিয়মের কারণে স্পিকার এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে মনে করে জাতীয় সংসদ সদস্যরা।
এ ছাড়া সংসদীয় দলের বৈঠকে সংসদ সদস্য রত্না আমিন রেজুলেশনে স্বাক্ষর না করার কারণে ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
দলীয় সংসদ সদস্যরা জানান, রত্না আমিন রেজুলেশনে স্বাক্ষর করতে চাননি। কেন স্বাক্ষর করবে না সে প্রশ্নে জি এম কাদের ক্ষুব্ধ হন রত্না আমিনের ওপর।
এ সময় জিএম কাদের অসংসদীয় ভাষায় কথা বলেন। এ সময় জি এম কাদের জানান, আগামী নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না।
জি এম কাদেরের আচরণে উপস্থিত জাপার সংসদ সদস্যরা ক্ষুব্ধ হন। এ সময় উপস্থিত এমপিরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবাদও করেন।
এ ঘটনার পরই বিষয়টি ভিন্ন সূত্রে সংসদের সবার কাছে পৌঁছে যায় এ খবর।
জাপা একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, জিএম কাদের আপদমস্তক একজন স্বৈরাচার। তার আচরণেই ফুটে ওঠে সবকিছু। এ জন্য হুসেইন মুহম্মদ তাকে সহ্য করতে পারতেন না।
এদিকে বেগম রওশন এরশাদ এরইমধ্যে জাতীয় পার্টির কাউন্সিল ডেকেছেন।
২৬ নভেম্বর এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ নীতি বিচ্যুতি হয়ে এবং দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ড, পদ প্রদান বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার কারণে জাতীয় পার্টির শক্তভাবে হাল ধরতে তিনি এই কাউন্সল ডেকেছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, রওশনপন্থী নেতাকর্মীদের যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের জন্য জাতীয় পার্টির পুরনো অফিস (বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে) নেওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনটি উদ্বোধন করা হবে। কাউন্সিল শেষ হলে তারা কাকরাইল অফিস ও বনানী অফিসে উঠবেন।
সারাবাংলা