জাতীয় পার্টিতে নতুন মেরুকরণের চেষ্টা

আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে নতুন একটি জোট গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করার পাশাপাশি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে। আগামীতে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী অবস্থান নেবে বলে ঘোষণাও দিচ্ছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তবে রওশন এরশাদ দলের যে সম্মেলন আহ্বান করেছেন তার কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে নতুন মেরুকরণের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ সম্মেলনের আহ্বান করার পাশাপাশি দলটির নিষ্ক্রিয়, ত্যাগী, বঞ্চিত ও বিভিন্ন দলে চলে যাওয়াদের জাতীয় পার্টিতে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, সম্মেলন ডাকার এখতিয়ার নেই রওশন এরশাদের।

সম্মেলন ডাকার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরাতে দলের ২৩ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে স্পিকারকে। দলটির প্রেসিডিয়াম সভাও এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে বলে জানানো হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। এখন বাকি প্রক্রিয়া মাননীয় স্পিকারের।’

সংসদে সরকারদলীয় একজন হুইপের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। জাতীয় পার্টিতে সৃষ্ট সমস্যা মিটে যেতে পারে বলেও দাবি করেন ওই হুইপ।

অন্যদিকে গত রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে সভা করেন রওশনপন্থিদের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসীহ। ওই সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ গোফরান যোগ দেন। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ম্যাডামের (রওশন) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি এ মাসের শেষের দিকে দেশে ফিরবেন। তারপর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল সোমবার গোলাম মসীহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে আরও ৭ নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের একজন সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা দৈনিক বাংলাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা অবস্থায় দলের পক্ষ থেকে কেউ বিরোধীদলীয় নেতার খোঁজখবর নেয়নি। চিকিৎসা ব্যয় বহন করেনি। ১১ মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে তিনি সভা ডাকলে ওনারা (জিএম কাদের) বললেন, এটা তিনি ডাকতে পারেন না। তারা ওই সভায় এসে কথা শুনতে পারতেন। পরে বিরোধীদলীয় নেতা রাগ করে চলে গেছেন। এখন সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সম্মেলন ডাকতে পারেন। তার সেই ক্ষমতা আছে। পারিবারিক হিসেবেও জি এম কাদের সাহেবের বড়। তিনি (রওশন) চেয়েছিলেন সবাইকে নিয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি করতে। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা।

দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডামকে (রওশন) দিয়ে তৃতীয় একটি পক্ষ এগুলো করাচ্ছে।’

তৃতীয় পক্ষের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম একজন সদস্য বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা যে মতবিনিময় সভা ডেকেছিলেন সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারাই মূলত তৃতীয়পক্ষ। দলে কোনো অবস্থান না পেয়ে তারা এখন ম্যাডামের (রওশন) ওপর ভর করেছে। আগামী নির্বাচনের আগে জি এম কাদের সাহেবকে বেকায়দায় ফেলে সরকারের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতে চায় ওই নেতারা। এই প্রক্রিয়ায় সরকারের একটি মহলের ইন্ধন বা মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *