শেখ হাসিনার চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রে

ভারতের সাথে সফল বৈঠক শেষ করে শেখ হাসিনা আজ দেশে ফিরেছেন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর আবার বিদেশ যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এবার তার মূল গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে কয়েকদিনের জন্য তিনি লন্ডনে অবস্থান করবেন, সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে।

ওই অধিবেশনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফর নানাদিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশ্ব যখন একটি অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সেই সময় ভারতের সঙ্গে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সুরাহা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে খাদ্য এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তিনি একটি দূরদর্শী দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এখন শেখ হাসিনার চোখ যুক্তরাষ্ট্রে।

গত কিছুদিন ধরে বিশেষ করে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি, এরপর র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে বিভিন্ন রকম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে।

এর পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করে গেছেন এবং এই সফরের পর বাংলাদেশের জন্য একটি অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

শুধু ব্যর্থতাই নয়, এই মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতাও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বিদায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শেষ পর্যন্ত তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু ততদিনে যে সর্বনাশ ঘটার তা ঘটে গেছে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা কিংবা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পিছনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের হাইকমিশনের নজিরবিহীন ব্যর্থতা সরকারের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। এই বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী এসব সম্পর্ক উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক ব্যতিক্রমী এবং গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে ভুল বুঝাবুঝির বিষয়গুলো আছে সেই বিষয়টি সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেবেন। বাংলাদেশের কোনো সঙ্কটের সমাধানই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ ছাড়া হয়না। প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রাক্কালে এই কথাটি আবার নতুন করে সামনে আসছে।

বিশেষ করে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের এই অস্বস্তি গুলো দূর করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ সফল হয়নি। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিল, সেই সফরেও খুবই ইতিবাচক ফলাফল হয়নি।

বরং মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বারবার বলছেন, আগামী নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয় এবং সকল রাজনৈতিক দল যেন অংশগ্রহণ করে, সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখছে। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া ছাড়াও অনেকগুলো কূটনৈতিক সংকটের সমাধানের উদ্যোগ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ধারণা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অবনতির পেছনে কিছু লবিষ্ট ফার্ম এবং স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর কিছু অপপ্রচারণাই মূলত দায়ী। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ যুক্তরাজ্য সফর করেছিলেন।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দিয়েছিল, জাতিসংঘে পুলিশ প্রধানের সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যেই বেনজীর আহমেদ সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সফরের পাশাপাশি তিনি নাগরিক সম্বর্ধনায় তিনি অভিযোগ করেন যে, ২২ জন তথ্যসন্ত্রাসীর অপপ্রচারের কারণে বাংলাদেশ সম্বন্ধে ভুল ধারণা নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এই ভুল ধারণা কাটানোর ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী নির্বাচনের আগে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এবার প্রধানমন্ত্রীর সফর কেবল সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়া নয় বরং বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ভুল বোঝাবুঝি গুলো আছে সেই ভুল বুঝাবুঝি গুলো মীমাংসার জন্য তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *