মন্ত্রিসভার রদবদল কি শেষ পর্যন্ত হবে?

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সবচেয়ে নাটকীয় বিষয় ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের না যাওয়াটা। শেষ মুহূর্তে তাকে সফর থেকে বাদ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাচ্ছেন না, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

বিশেষ করে একটি কূটনৈতিক সফরে যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদ পড়েন তখন তার অস্তিত্ব সংকটাপন্ন বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে শেষ মুহূর্তে সফর থেকে সরে দাঁড়ান।

কিন্তু সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, ড. মোমেন আসলে সরে দাঁড়ান নাই, তাকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে শেষ পর্যন্ত ড. মোমেন কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে থাকবেন?

তিনি কি মন্ত্রিসভায় থাকবেন? দীর্ঘদিন ধরে সরকারের মধ্যে মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রিসভায় রদবদলের কথা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত রদবদল হয়নি। মন্ত্রিসভায় রদবদল এবার কি হবে? এই প্রশ্নটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে ড. মোমেন যখন সফর থেকে বাদ পড়েছেন তখন থেকেই এই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফর শেষ করে আজ দেশে ফিরছেন এবং আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে তার যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। এই সময়টুকুর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

বিশেষ করে পুলিশ এবং প্রশাসনের মধ্যে বড় ধরনের কিছু পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে যেতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধান্তগুলো তাকে নিতে হবে তার মধ্যে রয়েছে পুলিশ প্রধান বা আইজিপি কে হবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত।

বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনেজীর আহমেদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে সেপ্টেম্বর। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ২৯ সেপ্টেম্বর ফিরবেন, কাজেই তার যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেই এই বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

একই সঙ্গে আগামী অক্টোবরের শেষ হচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের মেয়াদ। সেখানেও কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী হয়তো যাওয়ার আগেই নিতে পারেন।

একাধিক সূত্র বলছে যে, এবার যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের মুখ্যসচিব কে হবেন সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত ছাপিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেই হয়তো শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার রদবদল করবেন।

মন্ত্রিসভার রদবদলটা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। বিশেষ করে আগামী ডিসেম্বরে কাউন্সিলকে সামনে রেখে মন্ত্রিসভার একটি রদবদল হতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

তাছাড়া ড. মোমেন কাণ্ডের পর যারা অযোগ্য, ব্যর্থ এবং দায়িত্ব পালনে অক্ষম তাদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি করবেন? তিনি কি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দেওয়ার আগেই রদবদল করবেন নাকি মন্ত্রিসভা এভাবেই থাকবে?

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে যে, নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভায় যে একটি রদবদল করা হবে এটা অনুমেয়। কিন্তু কখন করবেন, এই সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী এককভাবেই নেবেন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভায় রদবদলের একক এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। কাজেই, যখন যৌক্তিক বিবেচনা করবেন তখনই মন্ত্রিসভা রদবদল করবেন। তবে মন্ত্রিসভার রদবদলের প্রত্যাশা এখন জনপ্রত্যাশায় রূপ নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *