‘শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগকে কেউ বাঁচাতে পারবে না’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করল স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। এ হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের কেউ রুখে দাঁড়াতে পারেনি, হয়নি কোনো সাংগঠনিক প্রতিবাদ। হতবিহ্বল হয়ে পড়েন অনেকে।

অনেকেই দিগ্বিদিক এদিক-ওদিক পালিয়ে বেড়ান। এরকম পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ চরম অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে। সেই সংকটময় সময়ে যারা আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জ্বীবিত করেছিলেন, যারা আওয়ামী লীগকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তাদের অন্যতম সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

গতকাল তিনি চিরবিদায় নিয়েছেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী কেবল আওয়ামী লীগের বাতিঘর ছিলেন না, যেকোনো সংকটের একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। সংকট মোকাবেলায় এবং চরম দুর্দিনের মধ্যে সাহস নিয়ে সামনে দাঁড়ানোর মত যে কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগে ছিলেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে প্রথম সারিতে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নাম আসবে।

পঁচাত্তরে পর ছিয়াত্তরে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেই উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ছিলেন অন্যতম। এ সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা মত, নানা পদ, নানা বিভক্তি এবং ষড়যন্ত্রের চোরা গুলিতে দলটি দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল।

ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা হয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম মতামত ছিল। সেই মতামতের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে পারবে না।’

এরপর ১৯৮১সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ সভাপতি করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ভেতর যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী অন্যতম।

আওয়ামী লীগ সভাপতি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ডাকতেন ফুফু বলে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের মধ্যে তিনি ফুফু হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের চরম কঠিন সময়ে তিনি যেমন নির্ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তেমনি শেখ হাসিনার প্রতি তার বিশ্বস্ততা এবং আনুগত্য ছিল প্রশ্নাতীত। যখনই কোনো সংকটে শেখ হাসিনা একাকী অনুভব করতেন তখনই তার পাশে গিয়ে দৃঢচিত্তে দাঁড়াতেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

১৯৮২ সালে আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে যায়। সেসময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। এরপর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনিই আবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পঁচাত্তরের পরবর্তী আওয়ামী লীগের গঠন প্রক্রিয়ায় তিনি ছিলেন অন্যতম যোদ্ধা। যখনই কঠিন সময় এসেছে, যখনই দুর্দিন এসেছে তখনই সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ছুটে এসেছেন শেখ হাসিনার কাছে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল ওয়ান ইলেভেন।

ওয়ান ইলেভেনের সময় যখন শেখ হাসিনাকে বন্দি করা হয় মিথ্যা মামলায়, সেই সময়ে জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী রাজনৈতিক জীবনে ভ্রান্তি নেই, কোনো পদস্খলন নেই, নেই কোনো চাওয়া পাওয়ার হিসেব। বরং সারাটা জীবন তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অনুগত ছিলেন। আওয়ামী লীগের সংকটে তিনি দলকে আগলে রেখেছেন। আর যে কোনো বিভ্রান্তিতে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বাতিঘর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *