গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনের আগে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

গুম-খুনে জড়িত র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধী দল-মতের বিক্ষোভের বিরুদ্ধে অত্যধিক শক্তি প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে বলেও তিনি মনে করেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১তম নিয়মিত অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সংক্ষেপে এসব কথা বলেন।

বক্তৃতায় তিনি আফ্রিকার বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তাঁর এই বক্তৃতায় বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিও গুরুত্ব সহকারে উঠে এসেছে।

গত মাসে (আগস্ট) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেটের বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেন, তিনি (মিশেল ব্যাশেলেট) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা, বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কর্তৃক আটকের পর গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত করার জন্য জাতিসংঘের অধীনে একটি স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অর্থাৎ, র‌্যাবের দ্বারা গুম-খুনের নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু তদন্তের উপর জোর দিয়েছেন ইউএনএইচসিআর-এর নতুন ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার। এবিষয়ে কাজ শুরু করেত বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গুম-খুন সহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কাজ করা মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা যাতে সরকারের দ্বারা কোনো ধরনের প্রতিশোধ বা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি না হয়।

অ্যাঙ্গোলা, কেনিয়া, লিবিয়া, ইথিওপিয়া ও মালীর মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতির পাশাপাশি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১তম নিয়মিত অধিবেশনে তার এই বক্তব্যটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

হংকং-ভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রোগ্রাম কোঅরডিনেটর মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১তম নিয়মিত অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের বক্তব্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

উল্লেখ্য, , জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট গত ১৪ই আগস্ট চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার প্রধান হিসেবে এটিই ছিল প্রথম বাংলাদেশ সফর।

বাংলাদেশে চারদিনের সফর শেষে ১৭ই আগস্ট রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বাধীনভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার স্বাধীন তদন্তে জাতিসংঘ ওয়ার্কিং গ্রুপকে ডাকার তাগিদও দিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সংলাপের সুযোগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছিলেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনার ।

সেই সংবাদ সম্মেলনে মিশেল ব্যাশেলেট বলেছিলেন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কমিটি সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা বেশ কয়েক বছর ধরে (বাংলাদেশে) জোরপূর্বক গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) কে দায়ী করা হয়েছে এবং এই ধরনের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে।

সেই সংবাদ সম্মেলনে মিশেল ব্যাশেলেট বলেছিলেন, জোরপূর্বক গুম সম্পর্কিত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেই কেবল সমস্যাটি সমাধানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছা ও প্রতিশ্রুতির বহিঃপ্রকাশ দেখা যাবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫১তম নিয়মিত অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ আগের হাইকমিশনারের বক্তব্যের ওপর জোর দেন।

উৎসঃ আমার দেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *