মনোনয়নে মনোযোগ আওয়ামী লীগের

নির্বাচনের আরও প্রায় দেড় বছর বাকি। এরইমধ্যে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত কিছু কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। নানা মারফতে নেয়া হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তথ্য।

এ কারণে রাজধানীমুখী অনেক নেতাই এখন নিয়মিত ছুটছেন নির্বাচনী এলাকায়। সেখানে সময় দিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন। আবার ওই সব নেতা রাজধানীতে নির্বাচনী এলাকার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নতুন নতুন অফিস খুলছেন।

জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কর্মী স্টাফ নিয়োগ দিচ্ছেন। অনেকে আবার এলাকার গরিব মানুষদের তালিকা তৈরি করে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এসবই করা হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা মানবজমিনকে বলেন, স্থানীয় অনেক নেতা আগামী জাতীয় নির্বাচনে লড়তে চান। নৌকার টিকিট তাদের প্রত্যাশা। এজন্য নানাভাবে তারা যোগাযোগ করছেন। কেউ কেউ আবার এখন থেকেই নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে গণভবন ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে ফাইল পাঠানো শুরু করেছেন। তাদের ধারণা এসব ফাইল প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির নজরে পড়লে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত।

নির্বাচন এলেই এ ধরনের ফাইল চালাচালি শুরু হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, যারা মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন তাদেরকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দলীয় কোনো কোন্দল থাকলে তা মিটিয়ে ফেলার কথা বলা হচ্ছে। এসব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে যিনি মনোনয়ন পাবেন তার আমলনামার উপর ভিত্তি করেই পেতে হবে।

আমাদের সকলের কর্মকাণ্ড বিচার বিশ্লেষণ করে এলাকায় সার্বিক দিক দিয়ে যারা গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বা যাদের বিরুদ্ধে কোনো বিতর্কিত অভিযোগ নেই, অনৈতিকতার অভিযোগ নেই, এ রকম ভালো গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচিত হবেন।

যারা বর্তমান সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন এবং সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে নানা ধরনের বিতর্কতমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন বা বিতর্ক সৃষ্টি করছেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে তাদের মনোনায়ন পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যাবে। একই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন নেতাদের নৌকার টিকিট দেয়া হবে।

যারা নির্বাচনী এলাকায় কোন্দল সৃষ্টি করেন বা জিইয়ে রাখেন তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে না, এটা পরিষ্কার। দলীয় সভাপতি এরইমধ্যে সবাইকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন। এই প্রস্তুত হতে গেলে অনেক বিষয় মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে দলীয় শূঙ্খলা একটি বড় বিষয়। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে সারা দেশে মাঠ জরিপের কাজ চলছে। দু’টি আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থাকে মাঠ জরিপের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই জরিপকারী সংস্থাগুলো মাঠে বিভিন্ন রকম জরিপকার্য পরিচালনা করছে। মূলত আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে কয়েক ধরনের তথ্য মাঠ পর্যায় থেকে নেয়া হচ্ছে। ওইসব তথ্যের উপরই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।

দলটির নেতারা বলেন, আগামী নির্বাচন হবে অত্যন্ত কঠিন এবং এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের শাসনামলের যে অগ্রগতি, অর্জন, এটিকে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার জন্য আগামী নির্বাচনে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। আর এই জন্যই আগামী নির্বাচনে যেন আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে কোনো রকম ঝামেলা না হয়, সে জন্য এখন থেকেই প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, গত নির্বাচনে বিজয়ীদের মধ্য থেকে যারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন, তারা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না এটি মোটামুটি নিশ্চিত। সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শতাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন। মনোনয়ন নিশ্চিতের আগে নিজ দলের কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে মোকাবিলা করতে হবে এসব মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের।

নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বহুমুখী দ্বন্দ্ব বাড়ছে। কে পাবেন দলীয় মনোনয়ন সেটা নিয়েও তৃণমূলে চলছে জল্পনা-কল্পনা। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রভাব যাতে জাতীয় নির্বাচনে না পড়ে সেজন্য নানা কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। মূলত আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।

ছাত্র রাজনীতির ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি চর্চার দাবি নিয়ে এবার তারা মনোনয়ন প্রত্যাশী। সম্প্রতি গাইবান্ধা-৫ আসনে সদ্য প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনকে। একে সাবেক ছাত্রনেতারা নির্বাচনী বার্তা হিসেবে মনে করছেন। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ঝাঁপে তারাও ছোটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *