বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের হালচাল
কিছুদিন আগেও একটা সময় ছিল যখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিদিন সরকার বিরোধী আন্দোলনের কথা বলত। বিএনপির নেতৃত্ব বলেছিল যে, রোজার ঈদের পর সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্র করা হবে।
বিএনপির নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যের কারণে কম ট্রলের শিকার হতে হয়নি। তাই সরকারকে হুশিয়ারি করে দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছিলেন, ঈদের পর বুঝবেন আন্দোলন কাকে বলে এ ধরনের নানা কথা।
ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীরাও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তুলেছিল বিএনপির আন্দোলন নিয়ে, জানতে চাওয়া হয়েছিল কোনো ঈদের পর বিএনপির আন্দোলন হবে। এরপরই মধ্যে রোজার ঈদ চলে গেলে, কোরবানি ঈদের আগে আগে সিলেট বিভাগসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়।
যেকারণে বিএনপি আর সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে পারেনি। তখন দলটির সিনিয়র নেতারা আবার বলতে শুরু করেছিলেন যে, দেশের বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি হলে তারা সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্র করবে, রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দিবে ইত্যাদি।
এরপর সেই বন্যা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে গেছে শুধু হয়নি বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলন, সরকারও টের পেল না আন্দোলন কাকে বলে। বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলন যখন তীব্র হওয়া কথা ঠিক এ সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে দলটির ভাঙ্গনের কথা।
এই যখন দলের অবস্থা তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বভাবই প্রশ্ন উঠছে, রাজপথে অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্ব বিএনপি কি সাংগঠনিকভাবে ভেঙ্গেই গেছে? কারণ দলটি প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে এবং এই ১৫ বছর ধরে এক দফা দাবিতেই আন্দোলনের কথা বলছে কিন্তু এখনো কোনো কার্যকরি আন্দোলন করতে পারেনি দলটি।
এমনকি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারেনি দলটি। এদিকে বিএনপি শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে।
একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে বিএনপি এখন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এই আন্দোলন কি সব বিরোধী দলকে এক মঞ্চে এনে করা হবে, নাকি স্ব স্ব অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলন- এই নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বিএনপির মধ্যেই। এমন পরিস্থিতিতে হতাশায় ভুগছে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
এরই মধ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর জ্বালানি তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে তিন কর্মী হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর ১৬টি স্পটে সমাবেশে কর্মসূচি শুরু করেছে বিএনপি।
চলমান এই কর্মসূচি শেষ হতে না হতেই গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জানান, শিগগিরই সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। দলটির মহাসচিবেরর এমন বক্তব্যের পর দলের ভেতর এবং বাইরে আবার পুরনো প্রশ্ন নতুন করে উঠছে, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন কবে?