সন্দেহের তালিকায় ১ জোট, ৪ দল

বিএনপি আগামী নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে চায়। আর এই লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন করবে বলে ঘোষণা করেছে আজ। বিএনপি বলছে যে, একটি অভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির ভিত্তিতে তারা যুগপৎ আন্দোলন করতে চায়।

কিন্তু যুগপৎ বা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপির মধ্যেই নানারকম মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপির বেশির ভাগ নেতাই কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে সন্দেহ করছে। তারা মনে করছে এ রাজনৈতিক দলগুলো আসলে সরকারের এজেন্ট এবং আন্দোলনের একটা পর্যায়ে তারা সটকে দাঁড়াবে এবং নির্বাচনের পথে পা বাড়াবে। এর ফলে সরকার লাভবান হবে।

বিএনপি মনে করছে যে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে তারা যে ভুল করেছিলো সেরকম একই ভুল যেন না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপির অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন ছিলেন সরকারের এজেন্ট এবং সেই ফাঁদেই বিএনপি পা দিয়েছিলো।

জাতীয় পার্টি: এখন বিএনপি যে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সন্দেহের চোখে দেখছে তাদের মধ্যে অন্যতম রয়েছে জাতীয় পার্টি। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টি ব্যাপক সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে এবং আগামী নির্বাচন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছে। জাতীয় পার্টিতে কিছুটা অস্থিরতাও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই মনে করেন যে, জাতীয় পার্টি আসলে সরকারের একান্ত অনুগত এবং সরকারের ইঙ্গিতেই সরকার বিরোধিতার নাটক করছে জনপ্রিয়তা আনার জন্য। এই নাটকের আসল উদ্দেশ্য হলো একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সব রাজনৈতিক দলকে আওয়ামী লীগে নিয়ে যাওয়া।

গণতন্ত্র মঞ্চ: সাম্প্রতিক সময়ে গঠিত জোট গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির অন্যতম শরিক দল হিসেবে কাজ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক ডাকসুর ভিপি নুরের দল, নাগরিক ঐক্য এবং আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল মিলে এই গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত হয়েছে কিন্তু এই জোটকে নিয়েও বিএনপির সন্দেহ রয়েছে। কারণ, এখানে রেজা কিবরিয়াসহ যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে তাদের অতীত আওয়ামী লীগ ঘরানার। আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং আওয়ামী লীগের চেতনায় বিশ্বাস করা দলগুলো আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করবে শেষ পর্যন্ত, এটি বিএনপির নেতারা বিশ্বাস করে না। তাই এই জোটকেও সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি।

এলডিডিপি: গতকাল এলডিডিপি’র প্রধান কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ মধ্যবর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। কর্নেল (অব:) অলি আহমেদকে বিএনপির নেতারা সবসময় সন্দেহের চোখে দেখেন। বিএনপি এখন মনে করে, যারা বিএনপি ভাঙতে পরে তাদের মধ্যে কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ অন্যতম। সম্প্রতি বিএনপির নেতাদের সঙ্গে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার একই রকম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সেই কারণে এলডিডিপি’র ভূমিকা আগামীতে কি হবে এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিএনপি নেতাদের।

জামায়াত: সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলাম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে যে, তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। জামায়াত সবগুলো নির্বাচনী এলাকাতেই প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করার চেষ্টা করছে। এ কারণেই বিএনপি জামায়াতকে সন্দেহের চোখে দেখছে। তারা মনে করছে যে, জামায়াত হয়তো আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্য সর্বনাশের কারণ বয়ে আনতে পারে।

কল্যাণ পার্টি: জেনারেল ইব্রাহিমের নেতৃত্বে কল্যাণ পার্টিও এখন সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু এই দলটিকেও সরকারের এজেন্ট হিসেবে মনে করে বিএনপি। তারা মনে করে যে, এই দলটিও নির্বাচনের সময় ডিগবাজি খেতে পারে।

আর এই পাঁচটি রাজনৈতিক দলকে সন্দেহের চোখে দেখে বিএনপি কিভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবে সেটাই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *