এবার ভারত যাচ্ছে বিএনপি?

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই বিএনপির কয়েকজন নেতা ভারত যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করছেন। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় লবিং তদবির করছেন, ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন।

একাধিক কূটনীতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে রাজনীতি ক্রমশ পশ্চিমাদের ছাড়িয়ে এখন ভারতমুখী হয়ে পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রী চারদিনের সফরে ভরতে যান।

সেখানে ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এই সফরকে ঘিরে এক ধরনের রাজনৈতিক বাহাস শুরু হয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে।

বিএনপি’র নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী কিছুই পাননি, শুধু দিয়ে এসেছেন’। তিনি এটাও বলেছেন যে, ভারত এখন বর্তমান সরকার ওপর খুশি নয়। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ভারত কিছু দেয়নি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আরেক ধাপ ওপরে। তিনি বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ৭ দফা যৌথ ইস্তেহার প্রকাশিত হয়েছে, কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছে। এছাড়াও সীমান্ত হত্যা বন্ধ সহ বিভিন্ন ইস্যুতে সমঝোতা হয়েছে। তারপরও বিএনপি’র নেতারা এ ধরনের মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক কৌশল থেকে।

বিএনপি মনে করছে যে, ভারত নিয়ে যদি একটি বিভ্রান্তি ছড়ানো যায় তাহলে সেটি জনমনে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে। তাছাড়া বিএনপি’র নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হবে। বিএনপি মনে করে যে, আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পিছনে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।

আর এই কারণেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো না, এটি প্রচার করে তারা এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে। অবশ্য বিএনপি’র জন্য এটাই প্রথম নয়।

এর আগে, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তখনও বিএনপি নেতারা মিষ্টিমুখ করেছে। কংগ্রেস ভারতের ক্ষমতায় নেই। কাজেই, ভারত আর আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিবেন এমন প্রচারণা বিএনপি করেছিলো, যেমনটি এখন করছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্কদের সঙ্গে বৈঠকে গিয়েছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আওয়াল মিন্টুসহ বিএনপির এক প্রতিনিধি দল। সেই সময় লন্ডনে গিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতীয় কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বিবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, ভারতের সঙ্গে তারা সুসম্পর্ক রক্ষা করতে আগ্রহী।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়নি নানা কারণে। বিভিন্ন সূত্র জানায় যে, তারেক জিয়ার নেতৃত্ব, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে ভারতের তীব্র আপত্তি রয়েছে এবং এই আপত্তির কথা তারা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছিলো। তারপরও বিএনপি নেতৃত্ব এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সেই প্রেক্ষাপটেই বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে ভারতের দূরত্ব হয়েছে বলে কোন কোন মহল মনে করেন।

এখন নির্বাচনের ১৫ মাস আগে আবার বিএনপি নেত্রীবৃন্দ ভারতে যেতে চাইছেন। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, এবার আমীর খসরু মাহমুদ ছাড়াও ড. আব্দুল মঈন খান, তাবিথ আউয়াল, শ্যামা ওবায়েদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ভারত যেতে পারে।

এ ব্যাপারে তারা ভারতের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ করবে এবং কার কার সঙ্গে দেখা করবে সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, আগামী অক্টোবর অথবা নভেম্বরে বিএনপির এই প্রতিনিধি দলের ভারত যাওয়ার কথা রয়েছে।

তবে তারা এখন পর্যন্ত কার কার সঙ্গে দেখা করবে বা কিভাবে দেখা করবে সে সম্পর্কে চূড়ান্ত কিছু করতে পারেনি। ইতিমধ্যে ভারত সফরে আগ্রহ জানিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের একাধিক কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপি নেতৃবৃন্দ যোগাযোগ করেছে এবং বিএনপি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক আগ্রহী, সে সম্পর্কে তারা বার্তা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই সফরের ব্যাপারে ভারত সবুজ সংকেত দিয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *