চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে আবার টানাপোড়েন

বর্তমান সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্তত ১২ জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রয়েছেন। এ অবস্থায় সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নীতি থেকে কিছুটা সরে এসেছিলো। কোনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়নি।

বিশেষ করে যারা আওয়ামী লীগের পক্ষের এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতাবান সচিব হিসেবে পরিচিত ছিলেন তাদেরও অনেককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ জন সচিব পদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে দুইজন জ্যেষ্ঠ সচিব রয়েছেন। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে। তার জায়গায় কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। এমনও গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আরও এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হতে পারে।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের চাকরির মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যেই তিনি নিশ্চিতভাবে দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী হিসেবে তিনি ওয়াশিংটনে যোগ দিচ্ছেন অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে। বর্তমানে যারা সচিব রয়েছেন তাদের মধ্যেও চুক্তিতে থাকা গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকারের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ২২ সেপ্টেম্বর।

তিনি এ পর্যন্ত একাধিকবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। এখন আবার তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য দেন-দরবার, তদবির করছেন বলে জানা গেছে। পাঁচ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকার পরও আবারও যদি তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে বলে সচিবালয়ের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করছেন।

নিয়মিত সচিবদের মধ্যে সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত ফজলুল বারীর চাকরির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. ইয়েমেন চৌধুরীরও চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে এই মাসে।

তিনিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য চেষ্টা করছেন না বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এ মাসেই।

জানা গেছে যে, তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারটি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ভাবছে এবং এটি আলোচনায় আছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজমের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে নভেম্বরে। একাধিক সূত্র বলছে যে, আলী আজমের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এলে তিনি অবশ্যই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন।

ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান অমিতাভ সরকার অবসরে চলে যাচ্ছেন এবং তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ৩১শে ডিসেম্বর অবসরে যাবেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, বিপিএটিসির রেক্টর রামেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব খলিলুর রহমান, কৃষি সচিব এম সাইদুল ইসলাম এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন।

এদের মধ্যে টেলিযোগাযোগ সচিব এম খলিলুর রহমানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনার কথা সচিবালয়ে চাউর হয়েছে। সচিবালয়ে এখন নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে একধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

কারণ, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ১৩ তম ব্যাচ সচিব হওয়ার জন্য যোগ্য হচ্ছে। অতিরিক্ত সচিব হওয়ার পর দুই বছর চাকরিতে থাকার পরেই একজন সচিব হওয়ার জন্য উপযুক্ত বিবেচিত হন। সেই বিবেচনায় ১৩ তম ব্যাচ সচিব হতে পারে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে এবং নতুন যে সচিব পদগুলো শূন্য হবে সেখানেই।

কিন্তু একই ব্যক্তিরা বারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার ফলে ১৩তম ব্যাচ না, অন্য ব্যাচগুলোরও সচিব হওয়ার সম্ভাবনা সংকুচিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরুদ্ধে এক ধরনের অবস্থান তৈরি হয়েছে এবং অধিকাংশ অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিবরা মনে করেন যে কোনো অবস্থাতেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হওয়া উচিত নয়। এই বিবেচনা থেকেই এখন সচিবালয়ে নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা এবং টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *