ডা. শাকিরকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে সিটিটিসি
রামপুরার বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেয়া চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালীকে প্রায় তিন দিন পর গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
সিটিটিসি সূত্র এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ছেলের নিখোঁজ পরবর্তীতে তাকে নিয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য এবং তার বিরুদ্ধে কুমিল্লার নিখোঁজ ৭ শিক্ষার্থীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে মামলার বিষয়টি ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা বলে দাবি করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গতকাল দুপুরে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার।
এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে সিটিটিসি বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি মামলা করে। মামলায় শাকির ছাড়াও আরেকজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
সিটিটিসির সূত্র বলছে, শাকির নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। তাকে গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর রামপুরার হাজীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইদিন এর আগে ঢাকার মগবাজার থেকে শাকিরের সহযোগী আবরারুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কথিত হিজরতের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সিটিটিসি বলছে, কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়ে যাওয়া কুমিল্লার সাত তরুণের সহযোগী শাকির।
তিনি নানাভাবে তরুণ-যুবকদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গি সংগঠনটির জন্য সদস্য সংগ্রহ, সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কথিত হিজরতে যেতে সহায়তা করতেন। শাকির ও আবরারুলের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার রাতে রামপুরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। সিটিটিসির করা এ মামলায় দু’জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ওদিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাকিরের বাবা বলেন, আপনারা ইতিমধ্যেই আমার ছেলে শাকির বিন ওয়ালীকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন। গত রোববার বিকাল ৩টায় বাসা থেকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া সাদা পোশাকে ৪ জন ব্যক্তি তাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
গতকাল ৪র্থ দিন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি যে, তাকে কিছু মিথ্যা, বানোয়াট মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা তথা সমগ্র দেশবাসী বিগত দিনের ঘটনা প্রবাহ থেকে পরিষ্কার বুঝতে পারি এভাবে যাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হয় তাদের ব্যাপারে কি ধরনের হাস্যকর অবিশ্বাস্য অভিযোগ সাজানো হয়। এমনকি প্রাক্তন এসএসএফ সদস্য চৌকস সেনা অফিসারের ব্যাপারেও প্রথমে কি ধরনের অবমাননাকর অভিযোগ সাজানো হয়েছিল তা আমরা প্রত্যেকেই জানি।
আমি আমার নির্দোষ মেধাবী চিকিৎসক ছেলে ডা. শাকির বিন ওয়ালীর ক্ষেত্রেও এ ধরনের মিথ্যা মামলা সাজানো হচ্ছে দেখে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও দেশবাসীর কাছে কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, আমার ছেলে শাকিরকে আইন বহির্ভূতভাবে বাসা থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়। এবং ৪ দিন পরে প্রকাশ্যে না আনার মতো অবৈধ কাজকে আড়াল করতে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়।
ইতিমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমের বিষয়ে বিভিন্ন রকম তথ্য উত্থাপিত হয়েছে সেই অবস্থায় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর ভাবমূর্তি আরও নষ্ট করার জন্য কোনো মহল এ ধরনের তৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছে কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা, করোনা পরবর্তী দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যখন চ্যালেঞ্জের মুখে তখন চিকিৎসকদের মধ্যে পেশাগত কাজে মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বিঘ্ন সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশা সৃষ্টির চেষ্টা, ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে তাদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা, নিরাপত্তা বাহিনীর বিষয়ে দেশবাসীর মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কিনা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছি। গতকাল কিছু জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ভুল তথ্যের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিসেস শাকির বাচ্চাদের সঙ্গে এখন এখানে আছেন। কোনো সংস্থার নজরদারিতে নেই। আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়া তুলে নেয়ার বিষয়টি তারা পরিবারকে জানায়নি। কিন্তু গণমাধ্যম জেনেছে।
তিনি বলেন, কুমিল্লায় নিখোঁজ কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে শাকিরের কোনো সম্পর্ক নেই। শাকির ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, ধার্মিক এবং ভদ্র। এলাকার সকলেই তাকে অত্যন্ত ভালো ছেলে হিসেবে জানে। তার বিরুদ্ধে যে সকল কাল্পনিক অভিযোগের কথা বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি তার সঙ্গে সামান্যতম কোনো সম্পর্ক থাকলে সে নিয়মিত বাসায় অবস্থান করতো না। শাকির আগামী বছরের জানুয়ারিতে এএফসিপিএস পরীক্ষার জন্য সারাক্ষণ পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতো। শাকির আইডিয়াল স্কুল, নটরডেম কলেজ থেকে বোর্ডে স্ট্যান্ড করে কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা করে।
শাকিরের প্রতি এ ধরনের জুলুমের প্রতিকার এবং তাদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাকিরের স্ত্রী আয়েশা। তিনি বলেন, আমি যদি নজরদারিতে থাকি তাহলে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কীভাবে হলাম। আমাকে তারা এখন পর্যন্ত তুলে নেয়নি কেন? ঘটনার সময় সিআইডি পরিচয় দেয়া পুলিশ সদস্যদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তারা আমার হাত থেকে শাকিরকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। শাকিরের অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে একজন প্রতিষ্ঠিত নারী চিকিৎসক বানাবেন। আমি এবং শাকির মিলে আর্তমানবতার সেবায় কাজ করবো। শাকির এফসিপিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। শাকিরকে গুম করতে না পেরে এখন তারা মিথ্যা এবং বানোয়াট মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে মানহানির মামলার প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানান তিনি।
শাকিরের বাবা ডা. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, তারা আমার ছেলেকে কোনো কারণে গুম করতে চেয়েছিলেন। হয়তো সেটা না করতে পেরে বানোয়াট এবং মিথ্যা একটি মামলা দিয়ে ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তার ছেলের সঙ্গে পুলিশ কিংবা অন্য কারোর শত্রুতা আছে কিনা জানতে চাইলে শাকিরের বাবা বলেন, আমার ছেলে অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় রেটিনা নামে একটি কোচিং সেন্টারে কিছুদিন কাজ করেছিল। এ সময় সেখানে ছাত্রদের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সে কোনো চলমান রাজনীতি কিংবা নিষিদ্ধ কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। রামপুরা থানায় হওয়া মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত আসামি আবরারুল হক ও শাকির বিন ওয়ালীকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, ৪টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।