বাংলাদেশে নির্বাচন: কোন দেশ কোন অবস্থানে
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গতকাল এই রোডম্যাপ ঘোষণা করে। এর ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নির্বাচন সড়কে যাত্রা শুরু করলো। এই নির্বাচন নিয়ে এবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানারকম উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পশ্চিমা দেশগুলো তো বটেই, বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে। নির্বাচনের আগে থেকেই তারা বলছে যে, বাংলাদেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তারা দেখতে চায়। এই নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয় সেই আশাবাদও তারা আগে থেকেই ব্যক্ত করছেন। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলোর স্ব স্ব অবস্থান জানার চেষ্টা করেছে বাংলা ইনসাইডার। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। গত বছর অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এবারের নির্বাচন যেন সকল দলের অংশগ্রহণে হয় এবং সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয় সে ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে। ইতিমধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস একাধিকবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চায় না। তারা বরং মনে করে যে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব।
ভারত: বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের একটি প্রভাব এবং মতামত অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু ভারত বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রতিবেশী। এই বাস্তবতা থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত কি ভাবছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনকে একান্ত অভ্যন্তরীণ ব্যাপার মনে করে। ভারত মনে করে যে, একটি গণতান্ত্রিক দেশ। সেই দেশে কিভাবে নির্বাচন করবে তা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে এই নির্বাচনে যেন সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় না আসে এবং ভারতের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ না হয় সেটা ভারত অবশ্যই নির্বাচনে দেখবে।
যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী অবস্থান একই এবং অভিন্ন। যুক্তরাজ্য মনে করে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন একটি অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন হওয়া উচিত। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে যুক্তরাজ্য সমর্থন করে কিনা, এ সম্পর্কে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন: ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে। তারা মনে করে যে এই নির্বাচনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত এবং গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় বরং নির্বাচন কমিশনকে গতিশীল, শক্তিশালী এবং স্বাতন্ত্র্য করার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব বলে মনে করে।
অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়াও বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু কিছু ভূমিকা রাখে। তবে এই ভূমিকাটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকারই অনুরণন মাত্র। কোয়াডভুক্ত দেশগুলোর অবস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতই। তারা মনে করে যে, বাংলাদেশের নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটা উচিত।
চীন: বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন চীনের প্রভাব এবং আগ্রহ বাড়ছে। আগামী নির্বাচন নিয়েও চীনের আগ্রহ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে চীন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনোরকম মন্তব্য করেনি। তবে চীন দূতাবাসের বিভিন্ন কর্মকর্তারা মনে করেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যিক সম্প্রীতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও প্রগাঢ় হয়েছে। তাই এই সম্পর্ক যেন কখনোই বিঘ্নিত না হয় সেটি তারা চায়। আগামী নির্বাচনের পরেও যেন বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ধারা অব্যাহত রাখে এটিই চীনের প্রত্যাশা।
এরকম একটি অবস্থান এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের এখনো ১৫ মাস বাকি। এরমধ্যে কূটনীতিকদের অবস্থানের নানা রকম পরিবর্তন হতেই পারে।