নির্বাচনের রোডম্যাপ: বিএনপির সামনে তিন পথ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ সকালে নির্বাচন কমিশন আগামী বছরের নভেম্বর মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও ঘোষণা করেছে। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা আগামী নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম করবে।
নির্বাচন কমিশনের এই রোডম্যাপের পর বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা রোডম্যাপ মানে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না সেটি সমযই বলে দেবে। কিন্তু বিএনপির সামনে এখন নির্বাচন নিয়ে তিনটি পথ খোলা আছে। বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিক নেতা বলেছেন যে, তারা নির্বাচন এবং আন্দোলন একই সাথে করতে চায়।
বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের একটি রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে। যে রোডম্যাপ ধরে তারা আন্দোলন এবং আন্দোলনের পর তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় এবং সেই দাবি আদায়ের পর একটি নির্বাচন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। কিন্তু বিএনপির এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হবে কিনা সে নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম আলোচনা আছে। তবে আগামী ১৫ মাসের কম সময় যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সেই নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির সামনে তিনটি পথ খোলা আছে।
প্রথমত, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। বিএনপির সামনে সবচেয়ে সহজ এবং স্বাভাবিক পথটি হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। কারণ ২০১৮ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল এবং এবার সেই নির্বাচনের ভুল ক্রটিগুলো চিহ্নিত করে এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন যে, গত ২০১৮ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে সেহেতু এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাটা কোনভাবেই যৌক্তিক হবে না।
বরং ২০১৮ নির্বাচনে যে ক্রটি বিচ্যুতি গুলো ছিল সেগুলোকে সামলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যে ব্যর্থতার দিক গুলো ছিল সেগুলো চিহ্নিত করে যদি নির্বাচন করা হয় তাহলে বিএনপির জন্য সেটি ইতিবাচক হবে। বিএনপির কোনো নেতা বলছেন যে, নির্বাচন থেকে দূরে থাকলে বিএনপির খুব একটা লাভ হবে না বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে বিএনপি এখন পর্যন্ত নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে আছে এই কারণেই যে দলের শীর্ষ দুই নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান কেউ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে, যেহেতু বেগম জিয়া বা তারেক জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছে না সে কারণেই তাদের মধ্যে এক ধরনের নির্বাচন বর্জন ভাবনা রয়েছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতার ধারনা তারেক জিয়ার কারণেই বিএনপি এখন নির্বাচন বর্জনের পক্ষে।
বিএনপির দ্বিতীয় পথ নির্বাচন বর্জন। যে কথাটি বিএনপি এখন বলছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। শুধু তাই নয় বিএনপির কোনো কোনো নেতা আগ বাড়িয়ে বলছে যে, এরকম নির্বাচন হলে সেটিকে প্রতিরোধ করা হবে। তবে প্রতিরোধ করার শক্তি বিএনপির আছে কিনা সেটি একটি বড় বিষয়। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল চায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন মহল বারবার বলছে যে, বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল যেন আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এটি তাদের প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা বিএনপির পূরণ করতে পারবে কিনা সেটি বিএনপির সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে বিএনপিকে অনেকগুলো ঝুঁকির মধ্যে যেতে হবে।
প্রথমে ঝুঁকিগুলো দল ভাঙার ঝুঁকি। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে সে ক্ষেত্রে বিএনপি ভেঙে যেতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। বিএনপির অনেক নেতাও সেটি মনে করেন। কারণ যারা নির্বাচন প্রত্যাশী তারা অন্য দলে গিয়ে বা নতুন বিএনপি গঠন করে নির্বাচন করবে। আর দ্বিতীয় ঝুঁকি হলো যে, রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্বের সংকটে পড়তে পারে বিএনপি। নির্বাচনে যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত না যায় তাহলে নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করতে পারবে। বিশেষ করে যে সমস্ত দলগুলোকে নিয়ে বিএনপি এখন আন্দোলনের চেষ্টা করছে সেই রাজনৈতিক দলগুলোর অধীনে নির্বাচনে যাবে। এরকম একটি বাস্তবতা বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করে তাহলে হয়তো বিএনপিকে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
তৃতীয় পথ হলো নির্বাচন বানচাল করা। বিএনপির মধ্যে যে প্রবণতা এখন সবচেয়ে বেশি। বিএনপির লক্ষ্য এখন নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হওয়ার আগে দেশে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা যে পরিস্থিতিতে নির্বাচনই না হয়। সেরকম পরিস্থিতির তৈরীর লক্ষ্যে বিএনপি রাজনৈতিক সহিংসতার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ব্যাপারে নানা রকম কথাবার্তা বলছে। সবকিছু মিলিয়ে এমন একটি পরিস্থিতি বিএনপি তৈরী করতে চাচ্ছে যেন আগামী নির্বাচন না হয়। এই তিন পথের মধ্যে কোন পথ বিজয়ী হবে এবং বিএনপি কোন পথে যাবে সেটি সময় বলে দেবে।