অবস্থান পরিবর্তন করছে যুক্তরাষ্ট্র?

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস গত দুইদিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হবার পর প্রথমবারের মতো গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের ভূয়শী প্রশংসা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের বদলে যাওয়াকে বিস্ময়কর বলেছেন এবং কোভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বড় করে চিত্রিত করেছেন। পরদিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছুটে গেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনে।

সেখানে দুর্নীতিবিরোধী মার্কিন সম্মেলনে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ দুটি ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা এবং পর্যালোচনা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি তাহলে অবস্থান পরিবর্তন করল?

পিটার ডি হাস ঢাকায় আসার আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নানারকম টানাপোড়ন চলছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশকে গতবছর গণতন্ত্রের সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি জো বাইডেন।

এরপর পরই শুরু হয় একের পর এক নানারকম চাপ প্রয়োগ। র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ জানাতে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

পিটার ডি হাস আসার পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস নির্বাচনমুখী একটি কূটনীতি শুরু করে। প্রথমে একাধিকবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত দেখা করেন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এবং অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অঙ্গীকারের কথাও ঘোষণা করেন। এরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বার্তায়।বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যে গোপনে একাধিকবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

এরকম পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করেছিলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুস্পষ্টভাবে বাংলাদেশকে একটি চাপ দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছেন এবং এই চাপের কারণ হিসেবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছিলেন যে ড. ইউনূস প্রসঙ্গ। যেহেতু ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে একটি মামলা এখন বিচারাধীন রয়েছে। ৪৩৮ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে মামলাটি আবার চালানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট। পাশাপাশি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগও দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের এই সমস্ত তদন্ত এবং ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা প্রেক্ষাপটেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন অবস্থান নিয়েছে বলে অনেকের ধারণা করছিল। তবে কোনো কোনো কূটনৈতিক বিশ্লেষক বলছিল যে, বাংলাদেশের কূটনীতি অনেকটাই চীন মূখী হয়ে পড়েছে। এ কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। যে কারণেই হোক না কেন দৃশ্যমান চাপগুলো বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু গত দুই দিনের ঘটনা প্রবাহে অনেকে মনে করছেন যে, তাহলে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান পরিবর্তন করছেন?

তবে বেশিরভাগ কূটনীতিক মনে করেন যে, অবস্থান পরিবর্তন নয়, দুটি ঘটনার সঙ্গে সার্বিক মার্কিন অবস্থান পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ যে কোন দেশের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে আসার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং বিদায়ের সময় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। কাজেই পিটার ডি হাস এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক। তবে এই রুটিন কাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ভিন্ন রকম বলে অনেকেই মনে করছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানবাধিকার কিংবা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা গুম ইত্যাদি কোন প্রসঙ্গ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আনেননি।

কূটনৈতিকরা বলছেন, এ ধরনের সৌজন্য সাক্ষাতে এ সব প্রসঙ্গ আনা অনভিপ্রেত এবং এটি আনা হয় না। দুদকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারকেও অনেকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন। বিশেষ করে দুদক যখন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করছে সেসব পিটার ডি হাস দুদকের কার্যালয়ে যাওয়াটাকে অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন।

যদিও দুদকের সচিব বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন, এটি একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক। কিভাবে দুদকের কার্যক্রম পরিচালনা হয় সে সম্পর্কে একটি ধারণা নিয়েছেন পিটার ডি হাস। তবে আনুষ্ঠানিক কোন আলোচনা হলে দুদুকের সাথে বৈঠকের পেছনে অন্য কোন ঘটনা রয়েছে বলেই কূটনীতিকরা মনে করেন। বিশেষ করে ইউনূসের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে।

সে আগ্রহের প্রেক্ষিতে পিটার ডি হাস গেলেন কিনা সেটি একটি বড় প্রশ্ন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র এখন নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা করতে চাইছে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। তবে শুধু দুটি বৈঠক দিয়ে এমনটি সরল সমীকরণ করা সম্ভব নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *