যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ব্যস্ত সময়

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশ নিতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যস্ত সময় পার করছেন। যুক্তরাজ্য সফরের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকালে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অবস্থানকালীন ক্ল্যারিজ হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

সকালে হোটেলের মিটিং রুমে লর্ড করন বিলামোরিয়াও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।

পরে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসে (এফসিডিও) দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথবিষয়ক মন্ত্রী লর্ড আহমদ সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশেকুন নবী চৌধুরী দৈনিক বাংলাকে এ তথ্য জানান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেলে লন্ডনে পৌঁছালে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

পরে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য (ইউকে) শাখা তাকে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান।

প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের ক্ল্যারিজ হোটেলে পৌঁছালে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের নেতৃত্বে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর চেয়ারম্যান আলহাজ শামসুদ্দিন খান, সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ জালাল উদ্দিন, সহসভাপতি অধ্যাপক আবুল হাশেম, সহসভাপতি হরমুজ আলী, যুগ্ম সম্পাদক নঈম উদ্দিন সিরাজ, মারুফ আহমেদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী প্রমুখ।

শেখ হাসিনা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে এখন যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি সফরে রয়েছেন।

আজ শনিবার যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় এবং লেবার পার্টির নেতা স্যার কেইর স্টারমার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা আছে।

এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বর বাকিংহাম প্যালেসে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে যুক্তরাজ্যের রাজার আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।

একই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী লন্ডন ত্যাগ করবেন।

জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত।

জানা গেছে, রানির শেষকৃত্যে যোগ দেয়ার কারণে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরে শিক্ষাব্যবস্থার বিবর্তন নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না শেখ হাসিনা। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি অনুযায়ী, ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডার্সের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আয়োজিত সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

এ ছাড়া তিনি ইউএনএইচসিআরের ফিলিপো গ্রান্ডি এবং স্লোলোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। একই দিন তিনি নারীনেত্রীদের ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্মেও যোগ দেবেন।

দিনের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত সংবর্ধনায়ও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর। এই গ্রুপে ছয়জন চ্যাম্পিয়নের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘের মহাসচিব খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক বিষয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ছয়টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের সমন্বয়ে এই গ্রুপটি গঠন করেন।

২২ সেপ্টেম্বর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বিষয়ক একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় কো-চেয়ার হিসেবে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

জানা যায়, রোহিঙ্গা সমস্যা ও টেকসই আবাসন নিয়ে আলাদা দুটি অনুষ্ঠান আয়োজন করবে বাংলাদেশ, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি সেক্রেটারিয়েট, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, গাম্বিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া রোহিঙ্গাবিষয়ক পার্শ্ব-অনুষ্ঠানটি কো-স্পন্সর করবে। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিফ করবেন।

২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।

প্রতিবারের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধাগুলো উপস্থাপন করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরবেন।

২৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে একটি নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসি সফর করবেন। ৪ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *