নির্বাচনে যেতে বিএনপির ৩ শর্ত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি যাবে না এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না।

নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে সেই রোডম্যাপও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে যে, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে এবং একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে নির্বাচনে যাবে। কিন্তু প্রকাশ্যে বিএনপির যাই বলুক না কেন গোপনে গোপনে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বিএনপির আলাপ-আলোচনা চলছে।

বিএনপির মধ্য থেকেই একাধিক নেতা বলেছেন, সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই তারা এগুচ্ছেন। একদিকে তারা বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচি দিচ্ছেন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে। অন্যদিকে তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানা রকম কথাবার্তা বলছেন যেন সরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন মহলের সাথেও তারা গোপন যোগাযোগ করছেন এবং দরকষাকষি করছেন।

একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির নেতারা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন এবং নির্বাচনে যাওয়ার একটি সমাধানের পথ খুঁজছেন। এক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে বলে জানা গেছে। তিনটি শর্ত যদি পূরণ করে তাহলে বিএনপি নির্বাচনের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে বলে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। এই শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-

প্রথমত, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার প্রধান শর্ত হলো বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে সে মামলাগুলো সরকার নির্বাহী আদেশে বা রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে প্রত্যাহার করে নেবে। ফলে বেগম খালেদা জিয়া একজন মুক্ত মানুষ হবেন, তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবেন।

দ্বিতীয় শর্ত হলো, নির্বাচনে যেন বিএনপি অন্তত ১০০ আসন পায় তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিএনপি দাবি করছে, গত নির্বাচনেও সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিলো এবং সেই সমঝোতায় বিএনপিকে ৭৫ টি আসন দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার সেই ওয়াদা ভঙ্গ করেছে।

তৃতীয়ত, বিএনপি বলছে তারেক জিয়ার মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে এবং তারেক জিয়াকে বিনা বাধায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া এবং গ্রেপ্তার না করার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, বিএনপির সঙ্গে নানারকম আলোচনা হচ্ছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটিতে সরকার আগের চেয়ে অনেক নমনীয়। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপির সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয় তাহলে খালেদা জিয়ার ইস্যুতেই সমঝোতা হবে। অন্য দুটি দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয় বলে সরকারের একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া এখন নির্বাহী আদেশে মুক্ত আছেন এবং তিনি অসুস্থ, চিকিৎসা করছেন। সরকারের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, নির্বাচনের আগে আগে হয়তো সমঝোতার খাতিরে সরকার বেগম জিয়াকে মুক্ত করতেও পারেন।

এটাই আওয়ামী লীগের শেষ ছাড় হতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ১০০ আসনের গ্যারান্টির ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার বলছে যে, নির্বাচনে ভোট কে কাকে দিবে সেটি সরকারের বিষয় নয়।

এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না এবং এই নির্বাচনকে যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না করা হয়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকবে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, শেখ হাসিনা এবার কোনোরকম জাল ভোট বা অন্য ধরনের নির্বাচনকে প্রশ্রয় দিবেন না। সে কারণে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আর অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হলে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কয়টি আসন পাবে তার নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই বলে সরকার এখন পর্যন্ত বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে।

বিএনপি তৃতীয় বিষয়ের ব্যাপারে সরকার একেবারেই নাকচ করে দিয়েছে। তারেক জিয়ার সঙ্গে সরকারের কোনো আপোষ নেই। কারণ, তারেক জিয়াকে আইন এবং আদালতের পথ অনুসরণ করেই দেশে ফিরতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারেক জিয়ার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো বাধা নেই। বরং সরকারই চায় তারেক জিয়া দেশে ফিরে আসুক এবং আইনের হাতে নিজেকে সোপর্দ করুক।

তারেক জিয়া যদি দেশে ফিরে আসে তাহলে তাকে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এখানে সরকারের কিছু করণীয় নেই বলে জানা গেছে। তবে সরকার এবং বিএনপি দুটি সূত্রই বলছে যে, আরও আলোচনা হবে। এটি আলোচনার শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়। নির্বাচনের কাছাকাছি সময় অনেক আলোচনা হবে এবং অনেক নাটকীয় পরিবর্তনও ঘটতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *