সর্বদলীয় নেতা হচ্ছেন জিএম কাদের?

জাতীয় পার্টির অবস্থা এখন টলটলায়মান। একদিকে রওশন এরশাদ জাতীয় সম্মেলন ডেকেছেন, অন্যদিকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে. বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে জাতীয় পার্টিতে এখন নির্বাচনবিরোধী শক্তি ক্রমশ শক্তি সঞ্চার করেছে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি এখন একটি ভিন্ন রকম অবস্থান গ্রহণ করতে চায়। তারা মনে করে যে বিরোধী দল হিসেবে যদি তারা এখন মাঠে থাকে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে। এই বিবেচনা থেকেই জাতীয় পার্টি এখন জি এম কাদেরের নেতৃত্বে সরকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।

আর এ কারণেই জাতীয় পার্টির মধ্যে একটা ভাঙ্গনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টি একদিকে যেমন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত, অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও গোপনে-প্রকাশ্যে যোগাযোগ করছেন।

জিএম কাদের ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন তারা মহাজোটে নেই। আগামী নির্বাচন তারা একা করবে। তবে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে একটি সর্বদলীয় জোটের কথা শোনা যাচ্ছে। এই জোটের নেতা হতে পারেন জিএম কাদের।

নির্বাচন করুক বা আন্দোলন, সর্বদলীয় জোটের মাধ্যমে করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্র গুলো আভাস দিচ্ছে এবং এ নিয়ে প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি এই সরকারবিরোধী সর্বদলীয় জোটে বিএনপিও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির অন্তত দুই দফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকগুলোতে জিএম কাদের ছাড়াও জাতীয় পার্টির ২ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। এসব বৈঠকে সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বা যুগপৎ আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জিএম কাদেরকে সর্বদলীয় জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে বলা হয়েছে। আর এ কারণেই রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে জি এম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে করার প্রস্তাব দিয়েছিল জাতীয় পার্টি থেকে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চি

ত করেছে।

কারণ, তাহলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটি দেখানো সুবিধা হবে যে, সংসদে বিরোধী দল এবং রাজপথে বিরোধী দল, দুটো মিলেই সরকারবিরোধী আন্দোলন করছেন। তবে জাতীয় পার্টি-বিএনপি ছাড়াও এই দলে জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো থাকবে। জাতীয় পার্টির একজন নেতা বলেছেন যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় দখল করতে চায় যেকোনো উপায়ে। ইভিএমসহ নানা রকম কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা প্রতিহত করা হবে। জাতীয় পার্টি কি নির্বাচন বর্জন করবে কিনা এরকম প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেছেন যে, এটি নির্ভর করবে সময় এবং পরিস্থিতির উপর। যদি পরিস্থিতি এরকম থাকে যে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই তাহলে আমরা নির্বাচন বর্জন করবো। তবে জাতীয় পার্টি সবসময় নির্বাচনের পক্ষে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন যে, সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এ নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাধিক রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকও করেছিলেন। সেই বৈঠকে জাতীয় পার্টি ছিল না। বিএনপির সাথে কৌশলগত কারণে প্রকাশ্য বৈঠক করছে না জিএম কাদের কিন্তু গোপনে বিএনপির সঙ্গে একটা সম্পর্ক রাখা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, শুধু বিএনপির সঙ্গে নয়, জিএম কাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন। আর সুশীল সমাজের একটা পরিকল্পনা আছে আগামী নির্বাচন হতে না দেওয়া। সকল দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন বর্জন করে তাহলে সরকারের জন্য আগামী নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়বে। সে বিবেচনা থেকেই জিএম কাদের এখন সুশীল সমাজ এবং বিএনপির কাছে অত্যন্ত লোভনীয় একজন ব্যক্তি। জিএম কাদেরও তাদের ফাঁদে পা দিয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির অনেক নেতা মনে করছেন। সেজন্যই তিনি এখন বিএনপির চেয়েও কঠোর সরকারবিরোধী হয়ে পড়েছেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম বক্তব্য রাখছেন।

আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যেই সরকারবিরোধী একটি সর্বদলীয় ঐক্যজোট হতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্র ধারণা করছে। এই সর্বদলীয় জোটে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ সকল দলগুলোকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই সর্বদলীয় জোটের নেতা জিএম কাদের হতে পারেন। একটি প্রশ্ন বিভিন্ন মহলে উঠেছে যে, বিরোধী দলের নেতা কে হবে? তারা যদি ক্ষমতায় জয়ী হয় তাহলে তাদের সভাপতি কে হবে? সেই বিবেচনা থেকেই জিএম কাদেরকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। বিএনপি’র মধ্য থেকেও একটা সংকেত পাওয়া গেছে যে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে তাদের আপত্তি নাই, যদি তাতে সরকারের পতন ঘটে। বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য হলো সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা। তাতে যদি তারা জিএম কাদেরকে নেতা মানেন তাদের কোনো সমস্যা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *